নেপালকে হারিয়ে আবার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

মনিকা-ঋতুপর্ণার গোলে সাফ নারী ফুটবলে টানা দ্বিতীয় শিরোপা

ছবি: বাফুফে

সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »

দশরথ স্টেডিয়ামে ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।

গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে মনিকা চাকমার গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেই লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখা গেল না। আমিশা কারকির লক্ষ্যভেদে সমতা টানল নেপাল। এরপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে আরও জমে উঠল লড়াই। মরিয়া বাংলাদেশকে শেষদিকে বাঁধনহারা উল্লাসে মাতালেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তিনি অসাধারণ কায়দায় জাল কাঁপালে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

বুধবার কাঠমুন্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়েছে পিটার বাটলারের শিষ্যরা।

সাফে বাংলাদেশের মেয়েদের এটি টানা দ্বিতীয় শিরোপা। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত গত আসরের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচও হয়েছিল এই দুই দলের মধ্যে। ভেন্যুও ছিল একই। সেবার নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ নারী ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ।

১৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার ভেন্যুতে কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারির সামনে বাংলাদেশ খেলতে নামে একাদশে একটি পরিবর্তন এনে। ভুটানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে খেলা মোসাম্মৎ সাগরিকার জায়গায় দলে ফেরেন ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়র। এই পরিবর্তন প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, চোটের কারণে সেমিতে খেলতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র।

৪-৩-৩ ফরমেশন বেছে নেওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। গোলরক্ষক আনজিলা তুম্বাপোর বদলে গোল-কিক নেওয়ার সময় পিছলে পড়ে যান নেপালের গিতা রানা। সামনেই থাকা ফরোয়ার্ড তহুরা বল পেয়ে ডি-বক্সের থেকে নেন শট। তা দুর্ভাগ্যজনকভাবে ক্রসবারে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। এরপর আলগা বলে তহুরার হেড জমা পড়ে আনজিলার গ্লাভসে।

দশম মিনিটে ক্রসবারের কল্যাণেই বেঁচে যায় পিটার বাটলারের শিষ্যরা। মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। সেই সুযোগে বল পেয়ে যান ফরোয়ার্ড সাবিত্রা ভান্ডারি। তার পাসে মিডফিল্ডার আমিশার দূরপাল্লার শট ক্রসবারে আটকে যায়।

২৪তম মিনিটে ডিফেন্ডার মাসুরা পারভিনের প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে নেওয়া শট পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি আনজিলাকে। পরের মিনিটে ডানদিক থেকে আসা ক্রস লুফে নিতে ব্যর্থ হন রুপনা। সেখানে থাকা সাবিত্রা শট নেওয়ার আগেই বল ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডার আফঈদা খন্দকার।

৩৪তম মিনিটে নেপালের ডি-বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দার শট চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। পরের মিনিটে নেপালের গোলরক্ষকের ভুলে সুযোগ আসে মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার সামনে। কিন্তু ডি-বক্সের বাইরে থেকে ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি তিনি। বল চলে যায় ফাঁকা গোলপোস্টের ওপর দিয়ে।

ভারত ম্যাচে লাল কার্ড দেখা রেখা পোডেলকে ফাইনালে পায়নি নেপাল। ৭ গোল করা এই ফরোয়ার্ডের অনুপস্থিতিতে আক্রমণভাগের দায়িত্ব ওঠে সাবিত্রা ভান্ডারির কাঁধে। তবে প্রথমার্ধে ফরাসি লিগে খেলা এই তারকাকে কড়া পাহারায় রাখেন আফিদা খন্দকার ও শিউলি আজিম।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণ – পাল্টা আক্রমণ চালায় দুই দল। অবশেষে ম্যাচের ৫২ মিনিটে ডেডলক ভাঙেন বাংলাদেশের মনিকা। তার গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু বেশিক্ষণ এগিয়ে থাকতে পারেননি সাবিনারা। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে প্রীতি রাইয়ের দুর্দান্ত এক থ্রো পাসে নেপালকে সমতায় ফেরান আমিশা কার্কি।

দুই দল সমতায় ফেরার পর থেকেই উত্তাপ বেড়ে যায় গ্যালারিতে। ৬০ মিনিটে কর্নার থেকে কাছাকাছি গিয়েও গোলের দেখা পায়নি সাবিনা খাতুনের দল। ৬৬ মিনিটে সুযোগ হাতছাড়া করে নেপাল। ৬৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মারিয়ার দুর্দান্ত এক শট ঠেকিয়ে দেন নেপালের গোলরক্ষক আঞ্জিলা। ৭১ মিনিটে প্রতি–আক্রমণে কাছাকাছি গিয়েও গোল পায়নি নেপাল।

অবশেষে ম্যাচের ৮০ মিনিটে ঋতুপর্ণার অসাধারণ এক গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ এক শটে নেপালি গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ঋতুপর্ণা।

শেষ পর্যন্ত তার গোলেই নির্ধারিত হয় শিরোপাভাগ্য। ২-১ গোলে নেপালকে হারিয়ে আরেকবার হিমালয় চূড়ায় উঠলো সাবিনা-তহুরারা। এর আগে নেপালকে হারিয়েই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়েছিল। ওই ফাইনালের জোড়া গোলদাতা কৃষ্ণা রাণী সরকার এবারও খেলেছেন।