শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
ঈদের আগে নগর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় থাকে লক্ষ্যণীয়। থাকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাস কাউন্টারে যাত্রীদের বাদানুবাদ। তবে এবার বদলে গেছে চিত্র। বাসের কাউন্টারে ভিড় কিছুটা থাকলেও নেই কোনো হৈ-চৈ। বাসে ওঠে যারা যাচ্ছে তাদের মুখে হাসি। যানজটও নেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
গতকাল বুধবার বিকেলে নগরীর নিউ মনছুরাবাদ, একে খান মোড় ও অলংকার মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাস কাউন্টার, ফুটপাতে ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। আবার কেউ বাসে বসে অপেক্ষা করছে বাস ছাড়ার। ছুটে যাওয়া মানুষদের কেউ একা আবার কেউ পরিবার নিয়ে যাচ্ছেন তাদের গন্তব্যে। রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না কোনো যানজট, নেই বাড়তি কোনো গাড়ির চাপও।
যশোর যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসের টিকিট কেটে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা সরোয়ার নামে এক যাত্রী বলেন, ‘এবার ছুটি ঠিকমতো পাওয়ায় মানুষ ধাপে ধাপে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে। তাই ভিড় নেই। অন্যসময় তো দাঁড়ানোর জায়গা খুঁজে পেতে কষ্ট হয়ে যায়। আমি মঙ্গলবার শেষ অফিস করেছি। রাতে বিশ্রাম নিয়ে এখন (বুধবার সন্ধ্যায়) পরিবার নিয়ে ধীরে সুস্থে যাচ্ছি। গত ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে আসার পর আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। এখনতো আর ফেরির ঝামেলা নেই। প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু দেখবো।’
কুমিল্লা যাওয়া উদ্দেশ্যে বাসে ওঠা লিমন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘অনেক ভিড় ও হয়রানির কথা ভেবে পরিবারকে আগে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন দেখছি, একসাথে যেতে পারতো। লোকজনের চাপ অনেক কম। শুনলাম, রাস্তায় জ্যামও (যানজট) নেই। তাই কুমিল্লা গিয়ে সবাই একসাথে রাতের খাওয়া-দাওয়া করতে পারবো।’
এ প্রসঙ্গে শ্যামলী বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা উদয়ন আচার্য বলেন, ‘সবগুলো গাড়ি শিডিউলের মধ্যে আসছে এবং ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রী আছে। তবে উপচে পড়া ভিড় নেই। ফলে যাত্রীদের মধ্যে কোনো অস্বস্তিও কাজ করছে না। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসা যাওয়ায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগছে। কুমিল্লা পর্যন্ত দুই-আড়াই ঘণ্টায় চলে যাচ্ছে। ওদিকে জ্যাম নেই। তবে গাড়ির গতি একটু কম। এটাতে আমাদের শিডিউলে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করি।’
পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা জোনের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘এ রিজিয়নে ২২টি থানা ও ফাঁড়িতে দুই শিফটে ৬৪ পেট্রোল টিম রয়েছে। এছাড়াও যে কোনো ইমার্জেন্সি সামাল দিতে আছে ৩০টি কুইক রেসপন্স টিম। যদি কোনো দুর্ঘটনা হয় তাতেও যেন কোনো জ্যাম সৃষ্টি না হয়, এজন্য ৫টি সরকারি ও ১২টি বেসরকারি রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৮২১ কিলোমিটারের পুরো হাইওয়ে মনিটরিংয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কন্ট্রোলরুম ও ৫টি সাব-কন্ট্রোলরুম আছে। রাস্তাও ঠিকঠাক আছে। এরপরও রঙ লাগানোর মতো কিছু সংস্কার চলছিলো। এগুলো করতে রাস্তা ব্লক রাখতে হয়। তাই ওই কাজগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। আশা করছি, এবারের ঈদ যাত্রায় কারো কোনো ভোগান্তি হবে না।
ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, ‘এবার ঈদের আগে কয়েকদিন ছুটি বেশি পাওয়ায় চাপ কম। এছাড়াও রেল ও বিমানেও মানুষ যাচ্ছে। চাপ বাড়লেও যাত্রীরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হয়, সেটা আমরা দেখি। এখন তো সবাই ঈদের ছুটি কাটাতে যাচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা যাত্রীদের নিরাপদ ও সুন্দর ভ্রমণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।’