২০০২ সালে পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আইনে বলা আছে, ‘পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২ (দুই) লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন ২ (দুই) বছর, অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন ২ (দুই) লাখ টাকা, অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা’।
বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক ১ (এক) বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ‘পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের দায়ে অন্যূন ২ (দুই) বছর, অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন ২ (দুই) লাখ টাকা, অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা’।
আইন আছে, আইনে সাজারও ব্যবস্থা আছে সে সঙ্গে বাজারে পলিথিনও আছে। পলিথিন বিপণন ও বিক্রি বন্ধ করতে পারছে না সরকার। পলিথিন ও প্লাস্টিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থাৎ ২৪৯ টন হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। কর্ণফুলীর নাব্য সংকট কাটাতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং নামের ৩০২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পের বেশিরভাগ সময় গেছে নদীর তলদেশে জমে ওঠা পলিথিন পরিষ্কার করতে। শুধু চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখ থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৫ টনের মতো পলিথিন উত্তোলন করা হয়েছে বলেও পত্রিকান্তরে জানা গেছে। শীত মৌসুমে নগরের সব খালগুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় খালের তলদেশের পলিথিনের স্তরগুলো ভেসে ওঠে। খালের মাঝখানে, দু’পাশে এসব পলিথিনের স্তূপের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি চলাচল ব্যাহত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এখনো বিভিন্ন হাটবাজার দেখা যায়, অবাধে পলিথিনের ব্যাগ করে তরিতরকারি, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের বাজার সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে।
২০১৯ সালের মে মাসে কর্ণফুলীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর খনন’ প্রকল্প শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চার বছরের এ প্রকল্পটি ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নদী এখনো পলিথিনমুক্ত হয়নি। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্ণফুলীর অনেক স্থানে পলিথিন ও প্লাস্টিকের দুই থেকে সাত মিটার আকারের স্তর জমেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) সূত্র বলেছে, এ কারণে কর্ণফুলীর নাব্যতাও ব্যাহত হচ্ছে। কর্ণফুলী দেশের আর দশটি নদীর মতো নয়। এই নদীর মোহনায় আছে দেশের অর্থনীতির প্রাণ চট্টগ্রাম বন্দর। কাজেই বন্দর রক্ষার তাগিদে হলেও এই নদীর নাব্যতা রক্ষা করা অগ্রাধিকারযোগ্য একটি কাজ। কাজেই পলিথিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নিলে দেশের অর্থনীতি তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেই সে সঙ্গে দেশের পরিবেশেরও ঘটবে। আমরা বুঝতে পারছি না নিষিদ্ধ পলিথিন এখনো বাজারে দেখা যায় কী করে! প্রশ্ন হলো আরও কত ক্ষতি হলে সরকার পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ