নিজস্ব প্রতিবেদক »
ভবন নির্মাণ করার সময় অনেকে চাঁদা দাবি করে। এলাকার সন্ত্রাসীরা এসব কাজ করে। বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয় আমাকে জানাতেন আব্বু। কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলছিলেন নেজাম পাশার (৬৫) ছোট মেয়ে ফাতেমা খানম জমজম।
নগরের খুলশির জালালাবাদে নির্মাণাধীন ভবন মালিক নেজাম পাশাকে নিজের পরনের লুঙ্গি ও তার দিয়ে হাত-পা বেঁধে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের দাবি দায়িত্বরত দারোয়ান মোহাম্মদ হাছান (৪২) এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে।
নিহত নেজাম পাশা ফটিকছড়ি আজাদি বাজারের ধর্মপুর এলাকার গুড়া মিয়া মিস্ত্রি বাড়ির নূর মোহাম্মদের ছেলে। বর্তমানে নগরের খুলশী জালালাবাদ এলাকার হাউজিং সোসাইটির পাশে ভিআইপি কাঁচা রোডে নিজের সাততলা ভবনের কাজে তদারকিতে আসেন।
জমজম বলেন, ‘২০১৯ সালে জালালাবাদ এলাকায় আমাদের বাড়ির কাজ শুরু করেছে। এতে ভবন দেখাশুনার দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ হাছান। আব্বু আমাদের ফটিকছড়ির বাড়ি থেকে গিয়ে নির্মাণকাজ তদারকি করতেন। আবার খুলশিতে বড় আপুর বাসায়ও থাকতেন। দারোয়ান হাছানের সাথে এলাকার সন্ত্রাসীদের ভাল সম্পর্ক। তার মাধ্যমে এসব সন্ত্রাসী আব্বুর কাছে বিভিন্ন কন্ট্রাক্ট চাইত। এসব সন্ত্রাসীর পক্ষ হয়ে বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দিতে আব্বুকে সুপারিশ করতেন হাছান। কিন্তু এসব বিষয়ে আব্বু রাজি না হয়ে নিজের কাজ নিজে করতেন। এই থেকে দারোয়ানের সাথে আব্বুর বিরোধ লাগে। দারোয়ানের বিভিন্ন সময়ে এমন অন্যায় আবদারে বিরক্ত হয়ে আব্বু তাকে চাকরি থেকে বের করে দিতে চেয়েছেন। তাদের চাহিদা পূরণ না করার ফলে আজ আমার আব্বুর এই পরিণতি।’
মেয়ে জমজম আরও বলেন, রোববার সকাল ৭টায় ফটিকছড়ি থেকে বিল্ডিংয়ের কাজ তদারকি করতে যান আব্বু। যাওয়ার পর আব্বুর সাথে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু সাড়ে ৪টা বাজে আব্বুর মোবাইল বন্ধ পাই। এতে আমি কিছুটা শঙ্কিত ছিলাম, জানালাম পরিবারকে। কিন্তু সবাই এটা স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে নেন। পরে রাত পৌনে ১১টায় আব্বুর নম্বর থেকে আমার নম্বরে কল আসে। কল রিসিভ করলে ওদিক থেকে হাছান বলেন, আপনার আব্বা রানীর হাট গেছেন। তিনি এখনও আসেননি। বিল্ডিংয়ের কিছু জিনিসপত্র পাঠিয়েছে। ড্রাইভারের দিয়ে উনার মোবাইলও পাঠিয়েছেন। কিছু টাকা বকেয়া আছে তা দিতে বললেন। উত্তরে আমি জানালাম আব্বু তো এমন কাজ করেন না। আমি আব্বুর সাথে কথা বলে জানাবো। এ অবস্থায় দারোয়ান কল কেটে দেয়। এরপর দারোয়ানের নম্বরে কল দিলে সে সন্দেহজনক কথাবার্তা বলে। আব্বু কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তোমার আব্বু কোথায় আমি জানি না। আব্বুর নম্বর থেকে কল দিয়ে যা বলেছেন সকল কথা তিনি অস্বীকার করেন। এরপর তাকে ভাইয়ারা কল দিলে, তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন। তার কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়াতে রাত ১২টায় সবাই শহরে রওনা দেয়।’
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনিজ্জামান বলেন, ‘রোববার বিকেল থেকে নেজাম পাশাকে ফোনে পাওয়া না যাওয়ায় পরিবারের লোকজন রাত সাড়ে তিনটায় থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই অভিযানে নামে আমাদের টিম। ভোর সাড়ে ৬টায় ওই নির্মাণাধীন ভবনের পাশেই আনিসুর রহমানের প্লটের সামনের দেওয়াল ঘেঁষে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় নেজাম পাশার লাশ। উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর থেকে দারোয়ান হাছান পলাতক। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নির্মাণাধীন ভবনে মালিকের লাশ
‘মেয়ের অভিযোগ সন্ত্রাসীরা চাঁদার জন্য এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে’