রাজিব শর্মা »
নগরীর কোতোয়ালী থানার জামালখান এলাকার নালাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে জমে আছে ময়লার স্তুপ। প্রায় তিন থেকে চার বছর ধরে জমে থাকা ময়লা না সরানোর কারণে মানুষকে বসবাস করতে হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। ময়লাগুলো পরিষ্কারের বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এর নালা পরিচ্ছন্ন কাজের টেন্ডারে দীর্ঘসূত্রিতার কথা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামালখানের এক বাসিন্দা জানান, নালায় ময়লার স্তূপের একটি ভিডিও ২০২২ সালের মে মাসে কাউন্সিলর বরাবরে পাঠানোর পরেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গতকাল রোববার বিকেলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে লিচুবাগানের পশ্চিমে কুয়ার পাড় এলাকা থেকে ওয়াপদা লাইন পর্যন্ত (প্রায় সাড়ে তিনশো হাত) স্থান জুড়ে ময়লার ভাগাড়। মশা, মাছি, দুর্গন্ধের মধ্যে বসবাস করছেন এলাকাবাসী। অনেক পরিবারের শিশুদের এ নালার ময়লার পাশে হাঁটাহাটি করতে দেখা গেছে। তাছাড়া কাজীর দেউড়ি এলাকা থেকে শুরু হওয়া এ খাল জামালখান, হেমসেন লাইন, রহমতগঞ্জ ও দেওয়ানবাজার হয়ে চাক্তাই খালের সঙ্গে মিশেছে। ঐ স্থানের নালাগুলোয় দীর্ঘদিন জমে থাকা ময়লায় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
জামালখান কুয়ারপাড় এলাকার মো. আতিক নামের এক ভাড়াটিয়া বলেন, ‘আমরা চার পাঁচ বছর ধরে এখানে ভাড়া বাসায় আছি। আমাদের পেছনের নালায় তিন বছর ধরে জমে আছে ময়লা। ময়লায় মানুষ হাঁটতে পারবে। পানি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। রাত হলে বাসায় থাকতে পারি না। উপরের ভবন থেকে জানলা দিয়ে ময়লার প্যাকেট রুমের পাশে ফেলে। তাছাড়া বর্ষাকালে ৩০ মিনিট বৃষ্টি হলেই নালার ময়লাগুলো আমাদের রুমে ঢুকে যায়।’
এদিকে দুর্ভোগের বিষয়টি চসিক কাউন্সিলর বরাবর জানানো হয়েছে কি’না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নীরব, সেখানে আমরা সাধারণ ভাড়াটিয়া হয়ে কি করতে পারি? আমাদের কথা কে শুনবে?’
ল্যাবওয়ান গলির মুখে মো. হানিফ নামের এক ভাড়াটিয়া বলেন, ‘আমরা দিনমজুর। অল্প আয়ের মানুষ। সারাদিন পরিশ্রম করে এসে রাস্তার ফুটপাতে থাকার চেয়ে এখানে কম দামে বাসা পাচ্ছি। ময়লা হলেও থাকতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের সেবকরা জামালখানের ঐ নালাটির রাস্তার মাথায় কয়েক হাত পরিস্কার করছিলো মাস ছয়মাস আগে, এরপর আর তাদের দেখিনি।’
কুয়ারপাড় এলাকার মো. জামিল নামে আর এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ‘আবর্জনার দুর্গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। যেমন মশা-মাছির অত্যাচার তেমনি দুর্গন্ধ। শীতকাল তো একরকম চলেই গেলো। গরমকালে জানালা না খুলেও পারা যায় না। এছাড়া সাথে থাকছে মশার অত্যাচার। আবর্জনার কারণে মশামাছির আনাগোনাও বেড়েছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, ‘শুধু জামালখান না, চসিকের কোনো ওয়ার্ডে নালা পরিষ্কারের জন্য তিনবছর ধরে টেন্ডার হয়নি। আপনি চসিকের সাথে কথা বললেও আমার এই কথায় বলবে। এলাকার নালাগুলোতে ময়লা জমে ভরাট হয়ে গাছ উঠছে। আপনারা একদিন আসুন। আমি নিজেই দেখাবো। কিন্তু টেন্ডার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের করার কিছু নেই। আমি নিজের উদ্যোগে কিছু স্থান পরিষ্কার করলে তো হবে না। আমি তো আর কোন স্পন্সর নিয়ে কাজটি করতে পারি না। সুতরাং নালাগুলো পরিস্কার করতে চসিকের টেন্ডার হতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে ছয় থেকে সাত মাস আগে জামালখানের প্রায় নালা আংশিকভাবে পরিষ্কার করা হয়েছিলো। জামালখানের কোনো নালায় ময়লা থাকার কথা না।’
জামালখানের (ল্যাবওয়ানের পাশ থেকে ওয়াপদা গেইট পর্যন্ত) দীর্ঘদিন জমে থাকা ময়লার ভাগাড় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জামালখান ওয়ার্ডের দায়িত্ব নিয়েছি দেড় বছরের মতো হয়। আমি এখনো জামালখানের অনেক স্থান চিনি না। তবে আমি বিষয়টি দেখবো।’
টেন্ডার জটিলতা নিয়ে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের উপপ্রধান কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার মতে জামালখানে দীর্ঘদিন ময়লা থাকবে তা হতে পারে না। তবুও আমরা বিষয়টি মাথায় রাখছি। আগামীকাল (সোমবার) অফিস সময়ে সরেজমিনে আমি নিজেই দেখে আসবো তারপর সিদ্ধান্ত নেবো কি করা যায়।’