চমেক হাসপাতাল
অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়ায় কমছে শিশুমৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
সারা দেশের ৭৪টি হাসপাতালে নবজাতকদের জন্য বিশেষ সেবা ইউনিট (এসসিএএনইউ) শেখ রাসেল স্ক্যানু নামে নামকরণ করা হয়েছিলো গত বছর। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নবজাতকদের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে বিশেষ এ সেবা ইউনিটে বর্তমানে বেড়েছে সেবার মান। এ ইউনিটে ফ্লো মিটার সংখ্যা বাড়ানো, আধুনিক এল ই ডি ফটোথেরাপি মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্প , মায়েদের বসার জন্য ভেতর এবং বাইরে ব্যবস্থা করা হয়েছে চেয়ারের। যার ফলে কোনো মাকে দীর্ঘ সময় ধরে আর দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না। ওয়ার্ডের আধুনিকীকরণে সন্তোষ প্রকাশ করছেন মায়েরা। বেড়েছে তাদের আস্থা।
সরেজমিনে শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দেখা যায়, পুরো ওয়ার্ডটি ৬টি ব্লগে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে কেএমসি বেইসড লেভেল-১ এ ২৪ শয্যা, ইনবোর্নে ১২টি, আউটবোর্নে ২৬টি, প্রিটার্নে ২১টি , একাডেমিক ব্লগে ৬টি, লেবেল ওয়ানে-১ এ ১২টিসহ সর্বমোট ১২৪ টি শয্যা রাখা রয়েছে। যা আগে ৩২ শয্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। একটি নবজাতককে শুষ্ক অক্সিজেন দেওয়া যায়না। ফ্লো মিটারের সাহায্য আদ্রতা বাড়িয়ে অক্সিজেন দিতে সহযোগিতা করে ফ্লো মিটার। সেই ফ্লো মিটার ২৫ থেকে ১২৫ টি বাড়ানো হয়েছে। একটি শিশু একটি ফ্লো মিটার দিয়ে সেবা নিতে পারছে। যেখানে একটি ফ্লো মিটার দিয়ে ৬-৭ জন শিশুকে অক্সিজেন দেওয়া হতো সেখানে এখন প্রতিটি শয্যায় আলাদা অক্সিজেন লাইন, উন্নতমানের ফোম, আন্ডার প্যাড (বিছানায় চাদরের মতো প্যাম্পাস), শয্যার পাশে মায়েদের বসার জন্য দেওয়া হয়েছে চেয়ার। যা আগে ছিলোনা।
নতুন সংযোজিত সেবার মধ্যে ৮টি ভেন্টিলেটর, আধুনিক এল ই ডি ফটোথেরাপি মেশিন ৭টি, ৫টি সিরিঞ্জ পাম্প, ২টি নেবুলাইজার যোগ হয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ হওয়ায় ক্রিটিক্যাল শিশুদের সেবার মানও বেড়েছে। কমেছে নবজাতক শিশুর মৃত্যু। প্রতি ব্লগে রাখা হয়েছে প্লাস্টিকের বড় বড় বালতি। যেখানে অনায়াসে ৫-৬ কেজি বর্জ্য ফেলা যায়। একই সাথে ওয়ার্ডের কর্নার ঘেষে রাখা হয়েছে অভিযোগ বক্স। যেখানে সেবা সংশ্লিষ্ট অভিযোগ জানানো যায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থাও নেন কর্তৃপক্ষ।
আনোয়ারা থেকে আসা রোগীর স্বজন সাবিনা আক্তার বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে একবার ৪ দিনের জন্য এখানে এসেছিলাম। গত চারদিন আগে আমার ছোট ননদের জন্য আবার আসতে হলো। ওয়ার্ডের ভেতরে সেবার মানটা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে মায়েদের বসার ব্যবস্থা করায় উপকার হয়েছে। আগে আমাদের সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে বা পাটি বিছিয়ে থাকতে হয়েছে। সে জায়গায় এখন চেয়ার রাখা হয়েছে। নবজাতকের মা এবং স্বজনরাও বসতে পারছেন। এছাড়া ওয়ার্ডের ফ্লোরও পরিষ্কার হয়েছে। ’
এ প্রসঙ্গে কথা হয় ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোহাম্মদ শাহীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে শেখ রাসেল স্কানু সেবার মান বাড়াতে কাজ করছি। অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ বাড়ায় ৫ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হার কমেছে। তা আরও কমানোর জন্য মায়েদের সচেতন হতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে আমরা ওয়ার্ডের চারপাশে নির্দেশিকামূলক পোস্টার লাগানোর ব্যবস্থা করছি। শুধুমাত্র অত্যাধুনিক মেশিন নয়, শিশুমৃত্যু কমাতে মায়েদেরও ভূমিকা রয়েছে।’
সেবার মান উন্নয়ন প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘আগে ওয়ার্ডে শুধুমাত্র ৩২ শয্যা ছিলো। রোগীর ভিড় লেগেই থাকতো। এখন তা বেড়ে ১২৪ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এতে নবজাতকদের চিকিৎসা সেবা প্রসারিত হয়েছে। অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়ায় কমছে শিশু মৃত্যু।’