চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যদি আমরা সংবর্ধনা না জানাই তাহলে এখানকার মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে না। এতে করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হবে। সামনে হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেয়ার সুযোগ থাকবে না। কারণ সবাই বয়স ও বার্ধক্যের কারণে একে একে চলে যাচ্ছেন না ফেরার দেশে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, লেখক ও ইতিহাসবিদদের স্থানীয় মুুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে যুদ্ধকালিন স্থানীয় বিভিন্ন অপারেশন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার আহ্বান জানান।
গতকাল সোমবার সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট চত্বরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১২০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে গেলে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাথা ও আত্মত্যাগ সর্ম্পকে ধারণা নিয়ে আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণে প্রস্তুতির নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময় বলে মন্তব্য করেন।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে ও সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চানলনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন।
এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম। এতে আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা নঈম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহম্মদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একে এম সরোয়ার কামাল, মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা হারিস চৌধুরী, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার।
সিটি মেয়র আরো বলেন, মুুক্তিযুদ্ধসহ সবকিছুতেই চট্টগ্রাম আগ্রগামী। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই চট্টগ্রাম থেকে তৎকালিন ইপিআরের ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা হয়। পরদিন কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান। স্বাধীনতার জন্য অনেক বড় বড় মনিষী ও রাজনীতিবিদ অনেক চেষ্টা করেও স্বাধীনতা এনে দিতে পারেনি। একমাত্র বঙ্গবন্ধু পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব হয়েছে। কারণ তিনি ছিলেন জনগণের নেতা। সেই কারণেই বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। মনে রাখতে হবে ইতিহাসের সন্তানদের কোনদিন মৃত্যু হয় না। ইতিহাস তাদের অমর করে রাখে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর এই ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে আবার সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়। সেজন্য বাংলাদেশ আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন বলেন, ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতিম দেশ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ভারত সরকার। ভারতের মিত্রবাহিনী সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। তাদের যৌথ আত্মত্যাগের আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভারত সরকারের আন্তরিক সর্ম্পক ছিল উল্লেখ করে তিনি জানান বর্তমানেও দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক অটুট রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতি প্রকাশ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। ডা. মাহফুজ বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের লড়াইকে কেন্দ্র করে। অথচ এখনো সর্বস্তরে বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন হয়নি। শহরের অনেক সাইন বোর্ড এখনো ইংরেজিতে দেখা যায়। সাইন বোর্ডে বাংলা ভাষা নিশ্চিত করতে মেয়রের সহায়তা অব্যাহত রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহম্মদ বলেন, আমরা অর্থ চাই না, জমি চাই না, চাই শুধু সম্মান। বেঁচে থাকতেই মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথভাবে সম্মান দেয়া হোক। পরে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারকে ক্রেস্ট এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রেস্ট ও সম্মাননা প্রদান করেন। বিজ্ঞপ্তি