করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছিলো ৮ মার্চ, সেই সংক্রমণ এখন ৫ লাখের ওপরে গিয়েছে। এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটাচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া এ রোগের কোন প্রতিষেধক এখনও পর্যন্ত নেই, এটি নিশ্চিত হওয়ার পরও আমাদের হুঁশ হচ্ছে না। এটা ঠিক যে জীবন জীবিকার সংগ্রাম চালাতে হবে নিজের এবং পরিবারের সবাইকে বাঁচানোর জন্য কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমাদের বে হিসেবী হয়ে চলতে হবে। করোনায় প্রথমদিকের মতো আতঙ্ক নেই কিন্তু বিপদকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া খুবই অনুচিত।
করোনার বর্তমান বিপদ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে করোনার নূতন ধরনের ভাইরাস যেটি বর্তমান ভাইরাসের চাইতে ৭০ শতাংশ দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যে এই নতুন ভাইরাস ভয়াবহ রকমে ছড়িয়ে পড়ছে এবং ৪০টিরও বেশি দেশ দেশটির সাথে সীমান্ত ও যোগাযোগ স্থগিত রেখেছে।
আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়, বাংলাদেশেও নতুন ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্তের খবর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার নতুন একটি স্ট্রেইন বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে, তার সাথে যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সাদৃশ্য রয়েছে। তাঁরা গত মাসে ১৭টি নতুন জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে ৫টিতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরণ শনাক্ত করেন। বিসিএসআইআর বিজ্ঞানী সেলিম খান নতুন ভাইরাসের শনাক্তকরণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এমন মিউটেশনের খবর রাশিয়া এবং পেরুতে পাওয়া যায়। বিসিএসআইআর এর চেয়ারম্যান ড. মো. আফতাব আলী শেখ বলেছেন, গবেষণা এখনও চলছে, কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় আসেনি উল্লেখ করে তিনি এ খবরে আতঙ্কিত না হওয়ার কথাও বলেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও করোনাভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দেখা যাচ্ছে, এখন করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঢাকা বিমান বন্দরে লন্ডন থেকে আসা বিমানের যাত্রীদের কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এদিকে টিকা আবিষ্কার এবং তা শীঘ্রই বাংলাদেশে আসবে এমন খবরের মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের ভাইরাসের খবরটি এলো। নতুন ধরনের ভাইরাস নিয়ে তাই বেশি করে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন কিন্তু আমাদের হাবভাব দেখে মনে হয়, সতর্কতার বিষয়টির গুরুত্ব আমরা সঠিকভাবে অনুধাবন করছি না। মাস্ক পরা নিয়ে আমাদের চরম উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রশাসনের অভিযানও মনে হয় কিছুটা শিথিল হয়ে পড়েছে। ‘মাস্ক না পরলে সেবা নয়’Ñ এটির কার্যকারিতা খুব বেশি চোখে পড়ছে না। মুদিখানা কিংবা খাবার দোকান অথবা অফিসÑআদালতে, কলেকারখানায়, জনসমাবেশে এটি সঠিকভাবে মানা হচ্ছেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনায় দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা পরিকল্পনা তৈরি করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। জীবনÑজীবিকার সংগ্রাম যুগপৎ চালিয়ে নিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা, তা স্মরণ করিয়ে দিতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। জনসমাগম সমাবেশ এড়িয়ে চলা ভাল। সরকারের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা যুক্তিযুক্ত। আইসিইউগুলি এখন খালি নেই, সুতরাং চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি চাই। বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাপ্য প্রণোদনা, করোনায় মৃত চিকিৎসক পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দ্রুত পরিশোধ করা প্রয়োজন। হাসপাতালগুলিতে রোগী বাড়ছে। তারপরও আমরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে উদাসীন, এজন্যে চরম মূল্য দিতে হবে আমাদের।
মতামত সম্পাদকীয়