রিমন সাখাওয়াত »
ষাটোর্ধ্ব বয়সী এহসানুল হক। জাতীয় পরিচয়পত্র বা কোন ধরনের লিগ্যাল কাগজপত্র না থাকায় করোনা টিকা নিতে পারেননি। কিন্তু গত মাসে গণটিকা কার্যক্রমে করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন।
গণটিকা কার্যক্রম ছাড়াও নিয়মিত টিকা দান কার্যক্রমে গত এক বছরে চট্টগ্রাম নগরের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ করোনা টিকা নিয়েছেন। এমন তথ্য জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী।
জানা গেছে, দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দু’বছর পেরিয়েছে। সংক্রমণের এক বছরের মধ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় টিকাও মিলেছে। তার ফলশ্রুতিতে জেলার বেশিরভাগ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। গত ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে এখনও টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে দেওয়া হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্মা, মডার্না, ফাইজার ও জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিন। প্রথম দিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা নিতে অনাগ্রহ থাকলেও করোনা শনাক্তের হার বৃদ্ধি ও প্রথম ডোজের টিকা প্রদান বন্ধ ঘোষণায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। টিকা গ্রহণে আগ্রহী হওয়ার ফলে বেশিরভাগ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর মোট জনসংখ্যা ৩১ লাখ ৮৩৩ জন। যদিও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনর তথ্য অনুযায়ী তা ২ লাখ বেশি রয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম শুরু থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছে ২৮ লাখ ৭ হাজার ৫৫৬ জন। যা নগরের মোট জনসংখ্যার ৯০ দশমিক ৫৪ শতাংশের বেশি। একইভাবে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছে ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৭০ জন। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সংখ্যা শতকরা হিসেবে ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ ডোজ নিয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৩ জন।
একইভাবে উপজেলার হিসেবে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩১ জন। এদের মধ্যে ৪৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৭ জন প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে। যা শতকরা হিসেবে ৭৫ দশমিক ১২ শতাংশ। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ২৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬৮৭ জন। যা উপজেলার মোট জনসংখ্যার ৫০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বুস্টার ডোজ নিয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮ জন।
জেলায় সর্বমোট জনসংখ্যা ৮৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬৪ জন। যার মধ্যে প্রথম ডোজ করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে ৭২ লাখ ৩২ হাজার ২৫৩ জন। যা শতকরা হিসেবে ৮০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৩৫৭ জন। যা শতকরা হিসেবে ৫৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বুস্টার ডোজ নিয়েছে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৭৪১ জন।
জেলায় সর্বমোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৫১ ডোজ টিকা ব্যবহার হয়েছে। যারমধ্যে নগরে ৪৯ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৯ ডোজ এবং উপজেলায় ৭৫ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫২ ডোজ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ২৫ লাখ ৭ হাজার ৯৪৮ জন। সরকারি নির্দেশনা না পাওয়ায় তাদের করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়নি।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ভেদ করেছি। বর্তমানে জেলায় ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। শূন্য থেকে ১২ বছর বয়সীদের বাদ দিয়ে নগরের প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ করোনা টিকার আওতায় এসেছে। তাছাড়া জেলায় মোট ৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৬৪ শিক্ষার্থী পেয়েছে করোনা ভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৮ লাখ ১৬ হাজার ৮৭৫ জন। যারা বাদ পড়েছে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে টিকা নিতে পারছে। নগরে ও উপজেলায় প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। টিকা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনায় গণটিকা ছাড়া শতকরা ১ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য ৯২ হাজার টিকা প্রদান করতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণটিকা কার্যক্রম শেষ হলে দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ টিকা দান কার্যক্রম গতি পাবে। তবে যারা প্রথম ডোজ নেয়নি তারা যোগাযোগ করে প্রথম ডোজ নিতে পারবে। তবে বুস্টার ডোজ গ্রহণে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে।’
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাব্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি অন্যান্য ভাইরাসের মত থাকবে। তবে টিকা নিতে হবে। তাহলে সুরক্ষিত থাকা যাবে।’