বিশ্ব পানি দিবস আজ
ভূঁইয়া নজরুল <<
চৌমুহনী পানওয়ালা পাড়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসার গভীর নলকূপে এক বছর আগেও পানি পাওয়া যেতো ৩৩০ ফুট নিচে। কিন্তু এখন তা পাওয়া যাচ্ছে ৩২০ ফুটের মধ্যে। হালিশহর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আগে ৩১৮ ফুট নিচে পানি পাওয়া গেলেও এখন পাওয়া যাচ্ছে ৩০২ ফুটে। অর্থাৎ স্থান বিশেষে তা ১০ থেকে ১৫ ফুট উঠে এসেছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। আর এতেই বদলে যাবে আগামীর পরিবেশ।
ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠার কারণ কী- জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা আগে ৯৮টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করতো। কিন্তু এখন ভূ-পৃষ্ঠস্থ উৎস (হালদা ও কর্ণফুলী নদী) থেকে পানি পরিশোধন বেড়ে যাওয়ায় গভীর নলকূপের সংখ্যা ৪০ এ নেমে এসেছে। একইসাথে মানুষ পাইপে পানি পাচ্ছে বলে নিজেদের গভীর নলকূপ বন্ধ করে দিচ্ছে। আর এতেই নগরীর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠে আসছে।’
মাঠপর্যায়ের তথ্যের খবর জানতে কথা হয় ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী (মড-১) আবদুর রউফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ওয়াসার প্রায় সবকটি গভীর নলকূপের পানির স্তর স্থান ভেদে ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত উপরের দিকে উঠে এসেছে। দিন দিন গভীর নলকূপের সংখ্যা কমছে বলে পানির স্তর আরো উপরের দিকে আসবে।’
একসময় নগরীতে প্রায় ২০ হাজারের বেশি গভীর নলকূপ ছিল। কিন্তু ওয়াসার অনুমোদন ছিল প্রায় সাড়ে চার হাজারের। এখন ওয়াসার অনুমোদিত গভীর নলকূপের সংখ্যা কমে চার হাজারে নেমে এসেছে। এছাড়া মানুষ ব্যক্তি উদ্যোগে অনুমোদনহীনভাবে যেগুলো বসিয়েছিল সেগুলোও বন্ধ করে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে ওয়াসার রাজস্ব কর্মকর্তা এরফান সাজ্জাদ বলেন, ‘ওয়াসার অনুমোদিত অনেক নলকূপও এখন বন্ধ। শুধু ঝুঁকি বিবেচনায় ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয় সেই শঙ্কায় অনেকে রেখেছে, কিন্তু চালু করছে না। আর এসবের প্রভাব গিয়ে পড়ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরে।’
ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর বাড়লে পরিবেশে কেমন প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক নুরুল্লাহ নূরী বলেন, ‘পটিয়া হুলাইন ছালেহ নূর কলেজ এলাকায় কোনো গভীর নলকূপ বসানোর অনুমোদন নেই। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই আদেশ দিয়েছে। এর কারণ হলো সেই এলাকায় অতিরিক্ত গভীর নলকূপের কারণে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে এবং সেখানকার নলকূপে কোনো পানি পাওয়া যায় না। এছাড়া পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে।
তিনি আরও বলেন, ওয়াসা গভীর নলকূপ বন্ধ করে দেয়ায় এবং ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে নগরীর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর উপরের দিকে উঠে আসবে। এতে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হবে এবং প্রাণীজগতের জন্য ভাল হবে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভূমিধসও কমে আসবে।
এদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত এবারের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘পানির মূল্যায়ন’। এ বিষয় সম্পর্কে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘পানি যে অমূল্য তাই বুঝানো হয়েছে। আর এজন্য পানির উৎসগুলো দূষণমুক্ত রাখতে হবে। পানি সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যথায় আগামীতে পানির সঙ্কট চরম আকার ধারণ করবে। এর জন্য অনেক বেশি মূল্য দিতে হবে।’
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম ওয়াসা সেমিনারের আয়োজন করেছে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করছে।