নগরীতে হরতালের  প্রভাব পড়েনি 

নিজস্ব প্রতিবেদক »
বিএনপির ডাকা হরতালের প্রভাব পড়েনি নগরজীবনে। পথে দেখা যায়নি হরতাল ডাকা নেতাকর্মীদের মিছিল বা কোনো কার্যক্রম। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, নগরজুড়ে বাস, টেম্পু, লেগুনা, যাত্রীবাহী পেট্রোলের অটোরিকশা চলাচল করেছে। স্বাভাবিক ছিল সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রো ও অযান্ত্রিক রিকশা-ভ্যান চলাচলও। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যানজটও হতে দেখা গেছে।
তবে আন্তঃজেলা পরিবহন অর্থাৎ দূরপাল্লার বাস চলাচল করেনি। সকালে এ কে খান ও অলংকার মোড় এলাকায় বাসের টিকেট কাউন্টারগুলো বন্ধ দেখা যায়। তবে দুপুর গড়াতে বাস কাউন্টারগুলো খুলতে শুরু করে। এছাড়া সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুলগুলো খোলা রেখে বার্ষিক মূল্যায়ন নেওয়া হলেও অভিভাবকরা হরতালে পরীক্ষা স্থগিত রাখার অনুরোধ করছেন।
অন্যদিকে পাহাড়তলী, সাগরিকা, অলংকার মোড়, ওয়ারলেস, জুবলি রোডের তিন পোলের মাথা, আসকার দীঘির পাড়, হামজারবাগ, চকবাজার, আমবাগান এলাকায় ঝটিকা মিছিল ও রাস্তায় টায়ার পুড়তে দেখা গেছে।
বিএনপির নেতা মো. ইদ্রিস জানান, চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় আইনজীবীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল করে।
মহানগর বিএনপির নেতা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘হরতালের জন্য আমাদের মিছিল বা পিকেটিং করতে হয়নি। মানুষ নিজে থেকে এ হরতালকে সমর্থন জানিয়েছে।’
দুপুরে পাহাড়তলী ডিটি রোডে কথা হয় টেম্পু চালক নিশানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লাগাতার হরতাল দিলে আমরা খাবো কী? পেটের দায়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি।’
শ্যামলী পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা উদয়ন আচার্য বলেন, ‘ঢাকার ঘটনার কারণে মানুষের মধ্য একটা আতঙ্ক
রয়েছে। এ আতঙ্কের কারণে মানুষ দূরে কোথাও যাচ্ছে না। এরপরও কিছু মানুষ আসছে, যাদের ঢাকা বা অন্য জেলায় যাওয়াটা খুব দরকার। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে কোনো কোম্পানি দিনে কোনো গাড়ি বের করেনি।’
গ্রিনলাইন বাস পরিবহনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক বাবুল আইচ বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে যাত্রী কম থাকায় মহাসড়কে কোনো গাড়ি বের করা হচ্ছে না। এমনিতে আমরা রাতে একটি করে গাড়ি বের করবো। দিনের খরচ পোষাতে যাত্রীদের রাতের জন্যই টিকেট কাটা হচ্ছে।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চলাচল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, ‘দূরপাল্লার গাড়িগুলো চলাচল করছে না। এমনিতে হাইওয়েতে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনার খবরও নেই। নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের টহল টিম সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবির টিমও বিভিন্ন জায়গায় টহল দিচ্ছে।’
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন জানান, হরতালের শুরু থেকে সন্ধ্যা
৭টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে কোনো যানবাহনে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
বেসরকারি একটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীর অভিভাবক সুমি বলেন, ‘হরতাল হলেও সবকিছু চলছে। এটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এরপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি হরতালে বন্ধ রেখে শুক্র-শনিবারে পরীক্ষা নিতো, তাহলে ভালো হতো।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক খাইরুল করিম বলেন, ‘আমরা সব মহলে অনুরোধ করেছি, শিক্ষার্থীদের যাতে কোনোভাবে যেন ক্ষতি না হয় সেভাবে কমসূচি রাখতে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া আছে- নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষের মধ্যে যেন পাঠ্যক্রম শেষ হয় সেভাবে ব্যবস্থা নিতে।’