নিজস্ব প্রতিবেদক »
চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমদ মারা গেছেন।ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাত পৌনে ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মোছলেম উদ্দিন আহমদের বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী ও চার মেয়ে রেখে গেছেন।
তার ভাগ্নে এজাজ মাহমুদ জানান, মোছলেম উদ্দিন প্রায় এক বছর ধরে অন্ত্রের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। গত একমাস তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন ২০১৩ সাল থেকেই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
মহানগর ছাত্রলীগের এক সময়ের সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপ-নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও বোয়ালখালী) আসনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যিনি আমৃত্যু বোয়ালখালীবাসীর প্রাণের দাবি কালুরঘাট সেতু নিয়ে সোচ্চার ছিলেন।
এজাজ মাহমুদ জানান, মোছলেম উদ্দিন আহমেদের প্রথম জানাজা সকাল ১১টায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজা শেষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মোছলেম উদ্দিনের মরদেহে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ সময়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মরহুমের স্মৃতি চারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মোছলেম উদ্দিন কর্মী থেকে নেতা হয়েছেন। দলের নিবেদিত প্রাণ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর চেতনার সৈনিক। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আওয়ামী লীগকেই লালন করেন তিনি। তার এমপি হওয়ার মতো শেষ স্বপ্ন শেখ হাসিনা পূরণ করেছেন।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, কীভাবে কর্মী থেকে নেতা হওয়া যায় তার কাছে (মোছলেম উদ্দিন) শেখার রয়েছে।
বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মোছলেম উদ্দিন একজন আইকন ছিলেন।
পরে হেলিকপ্টারে করে প্রয়াতের মরদেহ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে নেওয়া হয়। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে বোয়ালখালীর গোমদ-ী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মোছলেম উদ্দীনের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এসময় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বোয়ালখালীতে জানাজা শেষে মোছলেম উদ্দিন আহমেদের মরদেহ নগরীর আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে নেতাকর্মীরা আরেক দফা শ্রদ্ধা জানান। এরপর মরদেহ বহনকারী ফ্রিজার ভ্যান নেওয়া হয় লালখান বাজারের বাসভবনে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজা শেষে গরীবউল্লাহ শাহ মাজারে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
বিশিষ্টজনদের শোক
সংসদ সদস্য, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। শোক বিবৃতিতে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মরহুমের অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জাতীয় সংসদের স্পিকার
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদের চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক করেছেন। স্পিকার মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন
গভীর শোক প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অনন্য অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে দেশ ও দলের বিশেষ করে চট্টগ্রামের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পূরণ হবার নয়। তাঁর মৃত্যুতে চট্টগ্রামের মানুষ একজন অভিভাবককে হারাল।
শিক্ষা উপমন্ত্রী
গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শোকবার্তায় শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ আমার বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুসের সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে নিদারুণ নির্যাতন সহ্য করেন। সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুবকদের সংগঠিত করতে শেখ ফজলুল হক মনির নির্দেশে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক ছিলেন। কিছুদিন আগেও আমাকে বলেছিলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতির ইতিহাসে চট্টগ্রামের অনেক বিষয় বাদ পড়েছে, সেগুলো তিনি লিখে যেতে চান। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি মাঠে-ময়দানে, রাজপথে, আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তার ইন্তেকালে জাতি একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হারালো। এ ক্ষতি অপূরণীয়। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
চসিক মেয়র
গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি এক শোকবার্তায় বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে মোছলেম উদ্দিনের সঙ্গে একসাথে রাজপথে লড়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি প্রগতিশীল সংগ্রামে চট্টগ্রামবাসীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তিনি পরলোকগত হলেও তার আদর্শ আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে পথ দেখাবে, সাহস জোগাবে।
মহানগর আওয়ামী লীগ
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার
শোক প্রকাশ করেছেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, সিনিয়র সহসভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন ও সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর। তারা একজন সফল সংগঠক এবং খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ হিসেবে মরহুমের অবদানের কথা স্মরণ করেন। তারা মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
চবি উপাচার্য
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও উপউপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। এক শোকবাণীতে তারা বলেন, মোছলেম উদ্দিন আহমদ ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র, শান্ত, সদা হাস্যোজ্জ্বল, পরপোকারী সর্বোপরি সকল মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ।
মোহাম্মদ মনজুর আলম
সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, মোহাম্মদ মনজুর আলম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের আতœার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের আজীবন দাতাসদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়।এক বিবৃতিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি সালাহ্ উদ্দিন মো. রেজা এবং সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক বলেন, মোছলেম উদ্দিন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তার মৃত্যুতে জাতি একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হারালো।