নিজস্ব প্রতিবেদক »
সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর সময় চট্টগ্রামে সহিংসতায় আইনজীবী নিহতের ঘটনায় ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া এ ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ।
গতকাল দুপুরে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুৃষ্ঠিত হয়। সমাবেশের নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
এসময় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে ইসকন। আওয়ামী লীগের সহায়তায় ইসকন গত ১৬ বছর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছে। এখন জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ভারতে বসে যতই ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করা হোক আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেব। আমাদের দেশে সব ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদী সংগঠন পরিচালনা করবে, সেসব উগ্রবাদী সংগঠনকে বাংলাদেশে কোনো জায়গা দেওয়া হবে না।’
ইসকনকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘তাদের কর্মকাণ্ড আমাদের হতবাক করেছে। এই দেশের সাধারণ সনাতনী ভাইয়েরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার দালালরা ইসকনকে উস্কে দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আমরা বেঁচে থাকতে তা হতে দিব না। ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই প্রশাসনের যেসব জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরেরা বিরাজমান তাদের নির্মূল করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না; ভারতীয় কোনো আগ্রাসন বাংলাদেশে চলবে না; ভারতীয় কোনো দাদাগিরি বাংলাদেশে চলবে না। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে এক ও ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু যদি কেউ ধর্মের দোহাই দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তাহলে আমরা বাংলাদেশের ছাত্রজনতা তাদের প্রতিহত করতে একবারও ভাবব না।’
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন।
এ সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীকে ‘হত্যার’ ঘটনা ঘটে।
সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে সোমবার ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায়।
এদিকে, সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর সময় চট্টগ্রামে সহিংসতার ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, আদালত প্রাঙ্গণ, রঙ্গম সিনেমা হল ও কোতয়ালি মোড়ে তিন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলাগুলো করা হয়েছে।
এসব মামলায় মোট ২৮ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনায় মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০০/৭০০ জনকে, রঙ্গম সিনেমা হলের সামনের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০০/৪০০ জনকে অজ্ঞাত এবং কোতয়ালি মোড়ের ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করে অজ্ঞাত আরও ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তারেক আজিজ বলেন, গ্রেফতার ২৮ জনের মধ্যে আট জন আইনজীবী খুনের সাথে সন্দিগ্ধ আসামি রয়েছে বলে জানান তারেক আজিজ। তারা হত্যা মামলায়ও আসামি হবে বলে জানিয়েছেন।
মুন্সি সমিতি কার্যালয়ে আগুন
‘ইসকনকে’ সহযোগিতার অভিযোগে গতকাল চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের (মুন্সি সমিতি) কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফিরোজুল ইসলাম তালুকদার নামে এক বিক্ষুব্ধ আইনজীবী এ বিষয়ে বলেন, ‘এখান থেকে গতকাল (মঙ্গলবার) মুন্সির পোশাক পরে গিয়ে ইসকনকে সাপোর্ট করেছে। তারা আইনজীবীদের অংশ। তারা তো এটা করতে পারে না। সাধারণ আইনজীবীরা এটা নিয়ে ক্ষুব্ধ।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আদালতের মুন্সি সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিপন কান্তি নাথ বলেন, ‘আমাদের সমিতিতে গতকাল (মঙ্গলবার) কোনো বহিরাগত ঢোকেনি। আমাদের সংগঠনে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই আছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু আমি কোনো কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না।’
তবে আদালতের মুন্সি সমিতির কার্যালয়ের ঘটনা বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, কিন্তু দেখিনি। বড়সড় ঘটনা হলে জানা যেত। অনলাইনে যেসব ছড়াচ্ছে অনেকটা ভুল আছে।