নগরীতে করোনার পাঁচ ভ্যারিয়েন্ট

আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই: সিভিল সার্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা সংক্রমণ মে মাসের শেষে এসে কিছুটা কমতে থাকে। তখন নগরীতে দ্রুত সংক্রমণে করোনার যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) দায়ী ছিল। সর্বশেষ সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও করোনার দ্রুত সংক্রমণশীল ভারতীয় ধরন পাওয়া যাওয়ার খবর জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। ভারতীয় ধরন শনাক্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্ক থাকার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। অন্যদিকে ভারতীয় ধরনে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান সিভিল সার্জনের।
সর্বশেষ ভারতীয় ধরনের রোগী শনাক্ত হওয়ায় চট্টগ্রামে এ নিয়ে ৫ ধরনের করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে চট্টগ্রামেও করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে। এর আগে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক চট্টগ্রামে করোনার শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ান ধরনের তথ্য দিয়েছে। মুলত করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ হার ও মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হতো যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকান ধরনকে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্যের ধরনে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ হার ও মৃত্যু বেশি থাকলেও বর্তমানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রেকর্ড পরিমাণ মৃত্যু ও শনাক্তে দায়ী করা হয় ডাবল মিউট্রিশন ভ্যারিয়েন্ট বা ভারতীয় ধরন। ভারতীয় ধরনে সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় সে দেশে করোনা পরিস্থিতি অল্প সময়ের মধ্যে অবনতি হয়ে পড়ে। তবে বর্তমানে দেশের সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণ হার ও মৃত্যু দুটো বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহে ভারতীয় ধরন সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও আস্তে আস্তে তা দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি করোনা পরীক্ষাগারের ৪২টি নমুনা নিয়ে গবেষণায় চট্টগ্রামেও ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ার তথ্য মেলে। গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ফ্যাংশনাল জিনোমিক অ্যান্ড প্রোটিওমিক্স ল্যাবরেটরির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-ফুরকান। ভারতীয় ধরন শনাক্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত দুইজন রোগীর কেউই সম্প্রতি ভারতে যায়নি এবং তারা ভারত ফেরত কারো সংস্পর্শেও আসেননি। ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়া দুইজনের মধ্যে একজন ফটিকছড়ি উপজেলায় এবং অন্যজন নগরের বাসিন্দা।’
এর আগেও চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচনে কাজ করেছেন সিভাসু বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ডা. ত্রিদীপ দাশ। করোনার ভারতীয় ধরনের খবর উদ্বেগজনক জানিয়ে ডা. ত্রিদীপ দাশ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘ইতিপূর্বে আমাদের গবেষণায় চট্টগ্রামে করোনার যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়াসহ তিন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি। আজকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়াতে এটা স্বাভাবিকভাবে ধরে নেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামে করোনার ভারতীয় ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমেশন হয়ে গেছে। কারণ সীমান্তবর্তী জেলা থেকে যেভাবে আস্তে আস্তে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম কিংবা দেশের যথেষ্ট জায়গায় এ ধরনটি ছড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। যেটি এই গবেষণার ফলাফল।’
করোনার ভারতীয় ধরনটি চট্টগ্রামের জন্য উদ্বেগের কারণ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের কারণে মৃত্যু ও সংক্রমণ হার বেশি ছিল। এ বিষয়টি এখন আমাদের এখানেও লক্ষ্য করছি। শেষ কয়েক দিনের সংক্রমণের চিত্র দেখলে বুঝা যায় চট্টগ্রামে সংক্রমণ হার উর্ধ্বগতিতে। ভারতীয় ধরন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সকলের সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। এ ধরনটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সুপ্রভাতকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বিষয়ে আমাদের কোন তথ্য জানানো হয়নি। সারাদেশে যেভাবে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হচ্ছে সে হিসেবে চট্টগ্রামের শনাক্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই না। ভারতীয় ধরন শনাক্তে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ভারতীয় কিংবা অন্য যে ভ্যারিয়েন্ট হোক তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। বরং আমাদেরকে আরো বেশি সাবধানে থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সতর্ক থাকতে হবে। এখন যে এলাকায় সংক্রমণ বেশি হবে সে এলাকায় কড়াকড়ি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে। প্রয়োজনে উত্তরবঙ্গের মতো এলাকাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করা হবে।
নগরের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন করোনার সংক্রমণ উপজেলাগুলোতে বাড়তি। আগে সংক্রমণের ক্ষেত্রে যেখানে নগরীর ৯০ শতাংশের বিপরীতে উপজেলা পর্যায়ে মাত্র ১০ শতাংশ সংক্রমণ ছিল। সেখানে বর্তমান নগরীতে ৬০ শতাংশ সংক্রমণের বিপরীতে উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া উপজেলাগুলোর মধ্যে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান এবং রাঙ্গুনিয়া উল্লেখযোগ্য। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, এসব এলাকায় যদি সংক্রমণ বাড়তে থাকে তাহলে আমরা পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।