চসিক পরামর্শক কমিটির সভায় সুজন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রাম ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্রে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর নগরী। এ নগরীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অনেক অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। নগরীর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশন আর্থিক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত থাকায় এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা যায়নি। এও সত্য যে, সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে। নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ নগরীর জন্য বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এটাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার সব প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।
তিনি গতকাল টাইগারপাসের চসিক সম্মেলন কক্ষে নান্দনিক, পরিবেশবান্ধব ও উন্নত চট্টগ্রাম নগরী গড়ার লক্ষ্যে চসিক প্রশাসক কর্তৃক গঠিত পরামর্শক কমিটির প্রথম সভায় এসব কথা বলেন।
চসিক প্রশাসক চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ার হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের নাম উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এই কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপি-। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সড়কগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৫ টন। কিন্তু ইপিজেড ও বন্দরকেন্দ্রিক পরিবহনগুলো ১০-১৫ টনের বেশি মালামাল বহন করে থাকে। তাদের পরিবহনগুলোর বাড়তি চাপে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ব্যাপারে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং সড়ক কাঠামো উন্নয়নে তাদেরও অংশগ্রহণ থাকা বাঞ্চনীয়।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেল করে দিচ্ছেন। এর সাথে রেললাইন যুক্ত হচ্ছে মিয়ানমার হয়ে চীন পর্যন্ত। বে-টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে। এটি ভারত, চীনসহ সবাই ব্যবহার করতে পারবে। মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি হয়ে গেলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব সিঙ্গাপুরের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হবে। এ সমস্ত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিশাল উৎস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরামর্শক কমিটির প্রধান, সাবেক মুখ্য সচিব মোহাম্মদ আবদুল করিম বলেন, সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে পারলে চট্টগ্রাম একটি আন্তর্জাতিক নগরীতে উন্নীত হবে। সে ব্যাপারে উপায় অন্বেষণ করা আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন থেকে যে ম্যাচিং ফান্ড দিতে হয় তা কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি থোক বরাদ্দ পাওয়া ক্ষেত্রে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
পরামর্শক কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন ঠিকাদার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর গ্রহণকালীন পাওনা বাবদ ৩ শত ৫০ কোটি টাকা ঋণ ছিল। পূর্বের মেয়রের সময়ের এই দেনাগুলো আমি পরিশোধ করেছি। চলমান উন্নয়ন কাজ প্রক্রিয়ায় দেনা থাকাটাই স্বাভাবিক। আমার মেয়াদকালীন সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যয় করেছি। এছাড়া সরাসরি সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলোতে সিটি করপোরেশনের ম্যাচিং ফান্ড থেকে ২০ শতাংশ অর্থ প্রদান করেছি। নগরীর চাক্তাই খালের সংস্কারের জন্য ১২ শত কোটি টাকার ফান্ড থেকে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৯ শত ৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি।
সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সিটি গভর্মেন্ট গঠন ছাড়া সিটি করপোরেশনের সার্বিক কর্তৃত্ব অর্জন অসম্ভব। কারণ চট্টগ্রামের উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সেবার সংস্থার সমন্বয়ের নেতৃত্ব সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়রের হাতে না থাকলে তিনি হবেন টুঁটো জগন্নাথ। তিনি আরো বলেন, আমি মেয়র থাকাকালে একটি অর্গানোগ্রাম তৈরি করেছিলাম। যা আজ অবধি বাস্তবায়ন হয়নি।
এতে পরামর্শক কমিটির সদস্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নৌ-বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন কমডোর জোবায়ের আহমেদ বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি এম এ ছালাম,
শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়ন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর গৌতম বুদ্ধ দাশ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি প্রবীর কুমার সেন ও স্থপতি আশিক ইমরান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. মোজাম্মেল হক। বিজ্ঞপ্তি