নিজস্ব প্রতিবেদক »
বিআরটিসির দ্বি-তল বাস আটকে কথা বলার সময় না দিয়েই ড্রাইভারের সামনে চাবি খুলে নিয়ে নিল অবস্থানরত পরিবহন শ্রমিক। বাসভর্তি যাত্রীদেরও বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাস ফিরবে ডিপোতে যাবে এই মর্মে খালি গাড়িটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে টাইগার পাস মোড়ে এমন চিত্র দেখা যায়। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সকাল ৬টা থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছে গণপরিবহন, পণ্য পরিবহন মালিকসহ শ্রমিক সংগঠনগুলো।
ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে ডিজেল চালিত গাড়ির চালক-শ্রমিক ধর্মঘট করছে। কিন্তু সিএনজি চালিত পরিবহন কেন চলাচলে বন্ধ রয়েছে? এ বিষয়ে পরিবহন শ্রমিকেরা বলেন, নগরে গণপরিবহনের ২০ শতাংশের বেশি পরিবহন সিএনজি চালিত। এসব পরিবহন সকল রুটে চলাচল করে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাসের পরিবহনে কোন সমস্যা হয়নি। তবে পণ্য পরিবহনের বেশিরভাগ গাড়ি তেলের হওয়াতে তাদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যাটা হলো গাড়ির মালিকদের। সিএনজি চালিত গাড়ির মালিক যিনি তিনি আবার তেলে চালিত গাড়িরও মালিক। একটি দাবির জন্য তারা অন্যগাড়িগুলোও বন্ধ রেখেছে। যেন সকল সুবিধা তারা নিতে পারে।
এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে সড়কে নামতে চাই। কিন্তু মালিকেরা চাবি নিয়ে নিয়েছে। ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে ডিজেল চালিত পরিবহনের ধর্মঘট হতে পারে। কিন্তু গ্যাস চালিত পরিবহন বন্ধ রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই। গাড়ির মালিকের কথার বাহিরেও যেতে পারছি না।’
এদিকে শ্রমিক সংগঠনের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি বাস হলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পদক নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তেলের দাম বাড়াতে কোন সমস্যা নেই। বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। মালিকপক্ষ আমাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত মানলে সড়কে গাড়ি নামাতে কোন নারাজি নেই। কন্ট্রাক্টে গাড়ি ভাড়া থেকে বর্ধিত তেলের খরচ মালিকের থেকে কর্তন করা হবে। অথবা নতুন ভাড়া চার্ট দিতে হবে।’ কিন্তু এ বিষয়ে পরিবহন মালিকের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, ‘আমাদের অবস্থান যেমন আছে তেমন চলতে থাকবে। সকাল থেকে এক বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে ১২টার পর একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়েছে এ পরিবহন সংকট। অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় নগরে বিশেষ প্রভাব পড়েনি। বন্ধের দিনে নিজস্ব কাজ-কর্ম সারাতে গিয়ে অনেকে পড়েছে বিপাকে। আবার অনেকের কর্মস্থল ছিল খোলা। মূলত তাদেরই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে এই পরিবহন ধর্মঘটে। কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাদের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় কিছুটা যান চলাচল ছিল ওই রুটে। তাছাড়া সিএনজি চালিত বাস ছাড়া বেশিরভাগ পরিবহন এবং রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট গাড়িগুলো সড়কে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করেছে। কিন্তু এতেই চাহিদা মেটানো যায়নি গণপরিবহনের। সরেজমিনে নগর ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্রের।
তাছাড়া চট্টগ্রাম থেকে পণ্যবাহী কোন পরিবহন ছেড়ে যায়নি। আবার দূরপাল্লার গাড়িও ছিল বন্ধ।
বন্দরে পরিবহন ধর্মঘট
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পণ্য পরিবহন বন্ধ ছিল। বন্দরের বাহিরের গাড়ি ভেতরে বা ভেতরের গাড়ি পণ্য নিয়ে বাইরে যেতে দেখা যায়নি। বন্ধের দিনে বন্দরেও কম গাড়ি প্রবেশ করে এতে তেমন কোন প্রভাব দেখা যায়নি। জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামাসহ বন্দরের ভেতরে সকল কার্যক্রম সাধারণ সময়ের মতই পরিচালিত হয়েছে। তবে ধর্মঘট চলমান থাকলে বন্দরের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বহিরাগত পরিবহন
পরিবহন ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের আশপাশের উপজেলা থেকে নগরে প্রবেশ করেছে বহিরাগত গাড়ি। মূলত ভাড়া নৈরাজ্য সৃষ্টি করে হরিলুটের আশায় তারা নগরে প্রবেশ করে। পরিবহন ধর্মঘটে গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুবাদে তারা সুযোগ নিয়ে বর্ধিত ভাড়ায় গাড়ি চালাচ্ছে। বিভিন্ন মোড়ের ট্রাফিক সার্জেন্টদের মাসোহারা দিয়ে চলছে তাদের এই নৈরাজ্য। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাম সিএনজি আটক করতে গিয়ে শুক্রবারে এক ট্রাফিক কনস্টেবলও আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’
চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় পরিবহন ধর্মঘটে গাড়ি না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ফারহানা রুনা বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার কারণে গাড়ি বন্ধ থাকবে তা কোনদিনও সমাধান হতে পারে না। পরিবহন মালিক শ্রমিকেরা মিলে সরকারি দায়িত্ব প্রাপ্তদের সাথে মিটিংয়ে বসলেই সমাধান আসে। প্রতিবার গাড়ি বন্ধ রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কি লাভ বুঝি না। কিন্তু দুইদিন পর দাবি আদায় হলেও গাড়ি চালাবে আদায় না হলেও গাড়ি চালাতে হবে। ইনকাম ছাড়া কোন মানুষেরই মূল্য নেই।’