সুপ্রভাত ডেস্ক »
বর্ষার আগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পাইলট প্রকল্প শুরু করার জন্য দ্রুত কাজ করছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিকের তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। সেটির যাচাই-বাছাই দ্রুততার সঙ্গে করছে মিয়ানমার সরকার। পাশাপাশি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ও সামরিক জান্তাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য মিয়ানমার পাইলট প্রকল্প দ্রুত শুরু করতে চাইছে। বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং এ লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। রাখাইন পরিস্থিতি এখন আগের যেকোনও সময়ের থেকে ভালো। রাখাইনে মুসলিমদের জন্য নিরাপত্তা, জীবনযাপন ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। এ কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাইছে দুই দেশ।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মিয়ানমার বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও আসিয়ানের আটটি দেশসহ মোট ১১টি দেশের রাষ্ট্রদূত বা কনসাল জেনারেলদের রাখাইনে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনে পাঠায়। এরমধ্যে টেকনাফের উল্টো দিকে নাখুয়া রিসেপশন সেন্টার এবং এর পাশের একটি গ্রাম, সিতওয়েতে একটি ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট ক্যাম্প এবং চক্তো অঞ্চলে আরেকটি ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট ক্যাম্পসহ অন্যান্য জায়গা পরিদর্শন করে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাখাইনে নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়া শুরু করার পক্ষে অনুকূল। এ ছাড়া ভারত, চীনসহ আসিয়ানের অন্য দেশগুলো এ সমস্যার সমাধান বিষয়ে একমত হওয়ার কারণে বিষয়টি আরও সহজ হয়েছে। খবর বাংলাট্রিবিউন।
কেন পাইলট প্রকল্প
রোহিঙ্গাদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় প্রথম অবস্থায় অল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিক পাঠিয়ে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে চায় সব পক্ষ। এ বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, পাইলট প্রকল্পের ভালো-মন্দ বিবেচনা করে মূল প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় সবাই। পাইলট প্রকল্প সফল হলে মূল প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে সহায়ক হবে।
বর্ষার আগে প্রত্যাবাসন
কয়েক মাসের মধ্যে বর্ষাকাল শুরু হবে। এর আগে প্রত্যাবাসন শুরু করার লক্ষ্যে কাজ করছে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, পাইলট প্রকল্পের অধীনে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেটির যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে শেষ করা হবে।
ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের দুটি রিসেপশন সেন্টারে অভ্যর্থনা জানানো হবে এবং সেগুলো তৈরি করা শেষ হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের কয়েক ঘণ্টা থেকে ২৪ ঘণ্টা অবস্থানের পর রাখা হবে একটি ট্রানজিট ক্যাম্পে, যেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা একসঙ্গে অবস্থান করতে পারবে। ওই ক্যাম্পে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত অবস্থান করার পর তাদের নিজ বাসস্থানে ফেরত পাঠানো হবে বলে সূত্র জানায়।
মুসলমানদের জন্য সুবিধা
মুসলমানদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগের যেকোনও সময়ের থেকে ভালো এবং সেখানে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জীবিকা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ৯ বছর বন্ধ থাকার পরে গত বছর সিতওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ মুসলমান শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এ বছরও অনেক মুসলমান শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ফলে সেখানে মুসলমানদের জন্য শিক্ষার সুবিধা অনেক বেড়েছে।
রাখাইনে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত নয় এবং এটি সবার জন্য প্রযোজ্য জানিয়ে তিনি জানান যে এমনকি আরাকানিরা বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা নিতে চায়। তবে মুসলমানরা চিকিৎসার ব্যবস্থা পাচ্ছে।