পুরো দেশজুড়ে তরুণ সমাজের অনুপ্রেরণা হিসেবে খ্যাত, নারীশিক্ষার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দৃষ্টি চট্টগ্রাম আয়োজিত দৃষ্টি আড্ডায় যুক্ত ছিলেন তিনি গতকাল ৫ জুন রাতে।
দৃষ্টি চট্টগ্রাম ও চিটাগাং লাইভ এর ফেসবুক পেইজ এ অনলাইন আড্ডায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপার্চায প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের জীবনের কিছু না বলা কথা, কিছু অভিজ্ঞতা, কিছু দর্শন, কিছু আগামীর চিন্তা এই সবগুলোর সমাবেশের আলোচনায় মোহনীয় ছিল পুরো আড্ডা জুড়ে। তিনি বলেন, ‘এটাই শ্রেষ্ঠ সময় নিজের ভালোটুকু বের করে আনার, নিজেকে খোঁজো, আর স্বপ্ন দেখো বড় হওয়ার, যারা স্বপ্ন দেখতে জানে, তারা বসে থাকে না, লেগে থাকতে হবে সব সময়, যেন করোনা উত্তর সময়ে নিজের দেশ ও জাতির জন্য কিছু করতে পারো।’
উপস্থাপকের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি যা কিছু করিছি তা আনন্দের সাথে করিছি। আমার সহকর্মীরা সব সময় আমাকে সহযোগিতা করেছে। আজ থেকে ২৫ বছর আগে আমার ব্যক্তিগত সমস্যাকে পাশ কটিয়ে আমি সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা করে গেছি নিরবিচ্ছিন্নভাবে।
কোনো দিন উপাচার্য হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কি না এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমি কখনোই স্বপ্ন দেখিনি আমি উপাচার্য হবো। আমি বড় জোর ভেবেছিলাম আমি একজন বড় সাহিত্যিক হবো, একজন ভালো শিক্ষক হবো। পিএইচডি করে একজন বড়মাপের সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্ন ছিলো আমার। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাকে উপাচার্য হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। উনার আগ্রহে প্রধানমন্ত্রী আমাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের প্রথম মহিলা উপ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর থেকে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে আমি দায়িত্ব আনন্দের সাথে পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি যে দায়িত্বই আমাকে দেয়া হোক, তাকে পুরোপুরি ভাবে সফল করতে আমার চেষ্টার কমতি থাকবে না। চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে কাজ করে যাওয়ার। কারণ আমি বিশ্বাস করি উদ্দেশ্য সৎ ও মহৎ থাকলে আমি যে কাজই করিনা কেন সৃষ্টিকর্তা আমাকে সহযোগিতা করবেন।
জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো ড. শিরীণ আখতারের, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন আমার বাবা আফসার কামাল চৌধুরী ছিলেন একজন রাজনীতিবীদ, মুক্তিযোদ্ধা ও কক্সবাজার আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। উনার কারণে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। শিক্ষা জীবনে আমি যখন ডা. খাস্তগীর স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলাম তখন উনাদের উৎসাহে লালদীঘি ময়দানে বেশ কয়েকবার যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শেষে চট্টগ্রামের হোটেল শাহজাহানে বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার সাক্ষাৎকারে সেদিনের কথা মনে পড়ে। তিনি আমাকে বলেছিলেন রাজনীতি করবো কিনা, রাজনীতি করতে হলো প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে বলে তিনি সেদিন উপদেশ দিয়েছিলেন।
মা হিসেবে ড. শিরীণ আখতার কেমন এমন প্রশ্ন করা হলে মেয়ে রিফাত মোস্তফা বলেন, আমাদের শৈশব কেটেছে একটা বিপর্যয়ের মাঝে। ঠিক সেই সময়েও মা আমাদের সৃজনশীল কর্মকা- থেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি। সবসময় তিনি চেষ্টা করে গেছেন আমরা জেন মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ হই।
আড্ডায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. আদনান মান্নান বলেন, আমার জীবনে সবচেয়ে বড় প্রভাব আমাদের ভিসি। মানুষের শৈশবের স্মৃতিগুলো মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। আমি যখন বিতর্ক করতাম স্কুলে তখন উনি আমার বিতর্কের বিচারক হিসেবে ছিলেন অনেক বার। বিতর্ক শেষে উনার হাসি মাখা সেই উপদেশ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে জীবন চলার ক্ষেত্র।
কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার বলেন, ড. শিরীণ আখতার যেমন একজন মা, তেমনিভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। তিনি একজন আলোকিত মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে তিনি এগিয়ে চলেছেন।
দৃষ্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সাবের শাহ্’র উপস্থাপনায় আড্ডায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৃষ্টির সভাপতি মাসুদ বকুল, বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফ চৌধুরী। আরো ছিলেন সহ-সভাপতি বনকুসুম বড়–য়া নুপুর, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুদ্দিন মুন্না ও সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আরফাত। বিজ্ঞপ্তি
মহানগর