সুপ্রভাত ডেস্ক রিপোর্ট »
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পেছনের ষড়যন্ত্র তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠনে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দুই বছরেও তা গঠন করা হয়নি।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যায় জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের খোঁজার বিষয়ে কমিশন গঠনের রূপরেখা প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ হয়তো এই কমিশন চালু করা যাবে।
গত শনিবার (১৩ আগস্ট) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
কমিশনের অগ্রগতির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কমিশন গঠন ও তার কার্প্রণালীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোভিড যায় যায় করে যায় না। জনগণ বৈশ্বিক পরিস্থিতি অনুধাবন করছে। এখন অর্থনৈতিক ব্যাপারেও কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। নিশ্চয়ই বর্তমান পরিস্থিতিতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো প্রায়োরিটাইজ করতে হচ্ছে। সেজন্য হয়তো কমিশনের রূপরেখার ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যে আলাপ আলোচনা করা দরকার, সেটা হয়ে ওঠেনি।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, কিছুদিনের মধ্যে এ আলোচনা করতে পারবেন এবং এ বছরের শেষ নাগাদ কমিশন চালু করতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘উইচ হান্টিং বা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই কমিশন গঠন করা হবে না। ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে বদলে দেওয়ার জন্য যে কলঙ্কিত প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল, যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল— তার সঙ্গে কারা কারা জড়িত ছিল, নতুন ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে সেটা জানানোর জন্যই এই কমিশন গঠন করা হবে। এ ছাড়া, কাদের কাদের ব্যাপারে তাদের সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার সেটা জানানোও এই কমিশনের উদ্দেশ্য।’
কমিশন কেমন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার যে রূপরেখা, সেটা যদি উনি (প্রধানমন্ত্রী) একটু পরিবর্তন করতে চান, তার আগে আমি যদি ওটা বলে দিই তাহলে আমার মনে হয় সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের যে উদ্দেশ্য ও আদর্শ, সেটার ব্যাঘাত হয়।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন এই কমিশনের সম্ভাব্য রূপরেখার একটি খসড়া তৈরি হয়েছে, কিন্তু সেই খসড়া চূড়ান্ত করার সুনির্দিষ্ট কোন সময় তিনি বলতে পারেননি ।
১৫ই অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের পেছনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগের সমর্থনে রাজনৈতিক নানা বক্তব্য থাকলেও তা তদন্তের জন্য তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনা।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, ১৫ই অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের পেছনের শক্তি চিহ্নিত করা বা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগের তদন্ত একটি স্পর্শকাতর বিষয় বলেই হয়ত আওয়ামী লীগ সরকার ধীরে চলার নীতি নিয়েছে।
এবিষয়ে সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বিবিসিকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনের শক্তির তদন্ত করা আওয়ামী লীগের জন্যও স্পর্শকাতর এবং সেকারণেও কমিশন গঠনে বিলম্ব করা হতে পারে।
মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “এটা যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড এবং এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে, তাতে কোন সন্দেহ নাই। কারণ আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে মোশতাক প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন। তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচার ঠেকাতে চাইলেন। এছাড়া সেসময় খুনিদের নিরাপদ বিদেশ গমন এবং আশ্রয় নিশ্চিত করা হলো। ফলে ষড়যন্ত্র আছে। এর তদন্ত আওয়ামী লীগের জন্য স্পর্শকাতর হলেও তা উদঘাটন করা গেলে দলের জন্যই লাভ হবে।”
শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের বিচারে সরাসরি জড়িত সাবেক সেনাসদস্যদের মৃত্যুদণ্ড হয় ঘটনার ৩৫ বছর পর ২০১০ সালে। আদালতের রায়ে হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ ছিল, কিন্তু বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।