সপ্তমী উদযাপন
রুমন ভট্টাচার্য :
বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমী কাল শনিবার। নগরীর পাথরঘাটা শ্রীশ্রী শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা।
মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করাই কুমারী পূজা। শাস্ত্রমতে, এদিন মা দুর্গার অপর কোনো নামে কুমারীর নামকরণ করা হবে।
শাস্ত্রমতে ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতার সূত্রপাত। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় ‘কুমারী’ মা’-এর পূজা। অর্ঘ্য প্রদানের পর দেবীর গলায় পরানো হবে পুষ্পমাল্য। পূজার শেষে পুরোহিত দেবীর আরতি নিবেদন করে দেবীকে প্রণাম করবেন। পূজার মন্ত্র পাঠ করে ভক্তদের মধ্যে আশীর্বাদ ও চরণামৃত বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে মহাঅষ্টমীর দিন মানবকল্যাণের জন্য ১ থেকে ১৬ বছরের কুমারী কন্যাকে মনোনীত করা হয়। বয়সভেদে নাম হয় ভিন্ন। এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাথে মালিনী, আটে কব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোয়া রুদ্রানী, বারোয়, ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনোরয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অম্বিকা বলা হয়।
শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরের পুরোহিত ও অধ্যক্ষ শ্রীমৎ শ্যামল সাধু মোহন্ত মহারাজ বলেন, ‘২০০৪ সাল থেকে মন্দিরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কুমারী পূজাকে ঘিরে প্রতিবছর মন্দির প্রাঙ্গণে প্রচুর ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের আগমন সীমিত করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
করোনাকালীন সময়ে কুমারী পূজার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক করোনার কবল হতে দুঃখ লাঘবের উপায়ে কুমারী পূজার আয়োজন অপরিহার্য। মাতৃরূপে ঈশ্বরেরই একটি আরাধনা কুমারী পূজা। কুমারীতে সমগ্র মাতৃজাতির শ্রেষ্ঠ-শক্তি পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনী শক্তি, সকল কল্যাণী শক্তি সূক্ষ্মরূপে বিরাজিত। কুমারী পূজা মঙ্গলকর। কুমারী পূজা ছাড়া দুর্গা পূজা স্বার্থক হয় না।’
এদিকে গতকাল বন্দরনগরীসহ সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার সপ্তমী পূজা।
পঞ্জিকা মতে, গতকাল সপ্তমি তিথি পূর্বাহ্ন ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে কিন্তু কুলিকবেলানুরোধে দিবা ১২টা ৩৪ মিনিট পর্যন্ত ছিল। পূর্বাহ্ন ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ, ও সপ্তমীবিহিত পূজা প্রশস্তা সম্পন্ন হয়। পূজা শেষে ভক্তদের দেওয়া হয় অঞ্জলি। অনেক পূজাম-পে ছিল ভার্চুয়াল পুষ্পাঞ্জলির আয়োজন। তবে মহামারী করোনার কারণে কোনো ম-পেই ছিল না প্রসাদ বিতরণের আয়োজন।
এছাড়া সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে পূজাম-পগুলোতে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উপস্থিত ছিল কম। অনেক পূজাম-পে ও মন্দিরে জমে ছিল পানি। এ সময় অঞ্জলি দিতে আসা ভক্তদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
আজ মহাঅষ্টমীতে জেএমসেন হল অন্যান্য পূজাম-পগুলোতে সকাল থেকে রয়েছে নানা আয়োজন। এর মধ্যে অষ্টমীবিহিত পূজা, সন্ধি পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, অনাথালয়ে খাবার বিতরণ, জাগরণ পুঁথি পাঠ ও সন্ধ্যারতি।