নিজস্ব প্রতিবেদক »
বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের চান্দগাঁওমুখী র্যাম্প। ২০১৩ সালে মেইন ফ্লাইওভার নির্মাণের পর ২০১৭ সালে চান্দগাঁওমুখী র্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছিল হালকা যানবাহনের জন্য। ভারী যানবাহন চলাচল না করার বাধ্যবাধকতা ২০১৯ সালে সিটি করপোরেশন দায়িত্ব নেয়ার পর মানা হয়নি। এমনকি ভারী যানবাহন চলাচলের ব্যারিয়ারটি তুলে দেয়া হয়, এর প্রভাবেই চান্দগাঁও থেকে ফ্লাইওভারে যুক্ত হওয়া র্যাম্পটি কিছুটা দেবে গেছে বলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও সিটি করপোরেশন গঠিত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রায় একমত।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির সদস্য এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মূল ফ্লাইওভার ও র্যাম্পের যে অংশে দেবে গেছে সেটিকে মূলত ক্যান্টিলিভার অংশ বলা হয়। এ অংশে ক্যান্টিলিভারের গ্যাপ (মূল ফ্লাইওভার থেকে পিলারের দূরত্ব) ১৪ দশমিক ৩ মিটার। এটা এতো বেশি না। বিশ্বে প্রায় ১০০ মিটার দীর্ঘ ক্যান্টিলিভারও রয়েছে। তবে এ অংশে যান চলাচলের জন্য একটা ব্যারিয়ার ছিল, তা ডিজাইনেই বলা রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, সেই ব্যারিয়ারটা হলো ভারী যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার জন্য। এখন এটি মেনে র্যাম্প দিয়ে গাড়ি চলাচল করলে কোনো সমস্যা থাকবে না।
ফ্লাইওভার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কনসালটেন্ট ও ডিজাইনারদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি গত ২৭ অক্টোবর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেছেন, পিলারে কোনো ফাটল নেই। এমনকি ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যান চলাচলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে চান্দগাঁওমুখী র্যাম্প দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করা যাবে না। এই র্যাম্পের ডিজাইনই করা হয়েছে হালকা যানবাহনের জন্য।
সিডিএ’র পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট বিষয়ে বর্তমানে ফ্লাইওভার পরিচালনাকারী সংস্থা সিটি করপোরেশন একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির দুই সদস্য হলেন- সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ এর পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আবদুর রহমান ভূঁইয়া।
গতকাল টিমের দুই সদস্য ফ্লাইওভার পরিদর্শন করেন। ফাটল বিষয়ে জানতে চাইলে উভয়ে একইকথা বলেন। তারা বলেন, ‘এটা ফাটল নয়। ফ্লাইওভারের পিলারের ঢালাইয়ের সময় অনেক সময় ফোম দেয়া হয়। এই স্থানে ফোম ছিল। ফোমটি সরে যাওয়ায় একটু গ্যাপ দেখা যাচ্ছে। আর এই গ্যাপ কিন্তু আজকের না। নিশ্চয় নির্মাণের পরপরই ছিল। তাই পিলারে প্রকৌশলগত কোনো ত্রুটি নেই এবং কোনো ফাটলও হয়নি।’ ফাটল নিয়ে একই মন্তব্য করেছিলেন সিডিএ’র পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরাও। তারাও বলেছিলেন এটি ফাটল নয়।
এ বিষয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণে নিয়োজিত থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক গত ২৭ অক্টোবর বিশেষজ্ঞ টিম পরিদর্শনের পর বলেছিলেন, আমরা আগেও বলেছি পিলারে কোনো ফাটল নেই। পিলারে নির্মাণের সময় যে ফোম দেয়া হয়েছিল সেই ফোমের জায়গাটি এখন গ্যাপ দেখা যাচ্ছে। নিচ থেকে মনে হয় ফাটল, প্রকৃতপক্ষে তা ফাটল নয়। ফ্লাইওভারের নির্মাণের পর থেকে পিলারটি এমনই ছিল।
তিনি আরো বলেছিলেন, এটা সঠিক যে ফ্লাইওভার ও র্যাম্পের সংযোগস্থলে একটি পিলারের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মূল ফ্লাইওভারটি আগে নির্মাণ হয়ে যাওয়ায় তৎকালীন চেয়ারম্যান মহোদয়ের চাপে আমাদেরকে এভাবে নির্মাণ করতে হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল শুধু ছোটো গাড়ি চলাচলের জন্য এই র্যাম্পটি ব্যবহার হবে। কিন্তু প্রথমদিকে তা মেনে চলা হলেও পরবর্তীতে তা মেনে না চলার কারণে কিছুটা দেবে গেছে।
চার বছর পর ফাটলের প্রশ্নটা কেন উঠলো?
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পিলারটি এমন থাকার পরও ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের পর তা নিয়ে ট্রল করা প্রশ্নসাপেক্ষ। কেউ না কেউ এই বিষয়টি উত্থাপন করে সিডিএ’র উন্নয়ন কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছেন অথবা উন্নয়ন কার্যক্রমের গতি টেনে ধরতে চাইছেন।’
একটি বিষয় ভালোভাবে না জেনে প্রথমেই ‘ফাটল’ বলে দেয়া সমীচীন নয় উল্লেখ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসের উপর ভিত্তি করে যাচাই না করে ফাটল বলে দেয়া ঠিক হয়নি।’
উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় ফেসবুকে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের চান্দগাঁওমুখী র্যাম্পে ফাটলের একটি ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া হয়। এটা নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ট্রল হওয়ার পর রাতেই র্যাম্প দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এখনো চান্দগাঁওমুখী র্যাম্পে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।