সুপ্রভাত ডেস্ক :
এ আর রহমানকে সঙ্গীতের জাদুকর বলা হয়ে থাকে। তিনি সুরের মায়াজালে কোটি ভক্তের হৃদয় জয় করেছেন। তামিল থেকে শুরু করে হিন্দি গান সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। পাঞ্জাবি, সুফি, পপ থেকে শুরু করে তার সঙ্গীতায়োজনে মিলেছে বাংলা বাউল সুরের ছোঁয়া।
আজকের এ আর রহমান হওয়ার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে এই শিল্পীকে। সঙ্গীত দুনিয়ায় তিনি এক অপার বিস্ময়! ১৯৬৭ সালে ৬ জানুয়ারি এ আর রহমানের জন্ম হয়েছিল চেন্নাইয়ের এক হিন্দু পরিবারে। রহমানের বাবা সুরকার আর কে শেখর তার নাম রেখেছিলেন আর এস দীলিপ কুমার।
দিলীপের বাবা আর কে শেখর মালায়লাম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সুরকার হিসেবে কাজ করতেন। বেশ কিছু সিনেমায় কাজ করেছিলেন মিউজিক কন্ডাক্টর হিসেবেও। তার সঙ্গে কিছু সময় কি বোর্ড বাজাত ছোট দিলীপ। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন আর কে শেখর।
কঠিন জীবনের শুরু তখনই একদিকে সংসার, অন্য দিকে পড়াশোনা, দুই নৌকায় পা রেখে চলা সম্ভব হলো না। মায়ের সঙ্গে কথা বলে পড়াশোনায় ইতি টানে কিশোর দিলীপ। স্কুল ছেড়ে নিজেকে উৎসর্গ করলো সঙ্গীতের পায়ে।
দিলীপের আগ্রহ ছিল বাদ্যযন্ত্রে। ১১ বছর বয়স থেকে শুরু করে তিনি দীর্ঘদিন তালিম নেন প্রখ্যাত শিল্পী মাস্টার ধনরাজের কাছে। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন ধনরাজ। তার কাছে তালিম নিয়ে নিজস্ব গানের দলও করেছিলেন দিলীপ। এছাড়া নিজের শহর চেন্নাইয়ের (তখন অবশ্য মাদ্রাজ) বিভিন্ন ব্যান্ডেও কিবোর্ড বাজাতেন। কিন্তু সংসারে অনটন থেকেই গিয়েছিল।
এই সমস্যা সুরাহার জন্য দিলীপের ধর্মপ্রাণ মা বিভিন্ন ধর্মস্থানে ছুটতেন। যদি কোথাও মনের শান্তি পাওয়া যায়। প্রথম থেকেই তাদের পরিবারে সব ধর্মের প্রতি সম্মান ও উদারতা বজায় ছিল। জীবনের এমনই এক কঠিন সময়ে তারা সুফিবাদের সংস্পর্শে আসেন। পূর্ব পরিচিত এক সুফিসাধক তাদের পাশে দাঁড়ান। তিনি নিজেও সে সময় বৃদ্ধ ও অসুস্থ। তিনি দিলীপের মা কস্তুরী ছিলেন তার মেয়ের মতো। এই সুফিসাধকের প্রভাবে সমস্যা জর্জরিত পরিবারটি শান্তি খুঁজে পায়।
কস্তুরী তার সন্তানদের নিয়ে ধর্মান্তরিত হন ১৯৮৬ সালে। তার নতুন নাম হয় করিমা। নিজের নতুন নাম কি রাখবেন ঠিক করতে না পেরে দিলীপ গেলেন এক জ্যোতিষীর কাছে। তিনি গণনা করে বললেন, ‘আব্দুল রহমান’ বা ‘আব্দুল রহিম’-এর মধ্যে যে কোনও একটি নাম তার জন্য শুভ হবে।
১৯ বছরের তরুণের পছন্দ হল ‘রহমান’ শব্দটা। তিনি ওটাই বেছে নিলেন। মা বললেন, তার আগে ‘আল্লারাখা’ কথাটা রাখতে। নামটির সংক্ষিপ্ত হলো ‘এ আর রহমান’-এ। আজ, নামটি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান।
১৯৯২ সালে মণিরতœম পরিচালিত একটি কফির বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে কণ্ঠ দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। এরপরই তিনি মণিরতœমের তামিল সিনেমা ‘রোজা’ ছবিতে প্রথম সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজের সুযোগ পান। পারিশ্রমিক পান ২৫ হাজার রুপি।
শিশু শিল্পী হয়ে দূরদর্শন ‘ওয়ান্ডার বেলুন’ শোতে দেখা গিয়েছিল রহমানকে। যিনি একসঙ্গে ৪টি কী-বোর্ড বাজিয়ে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। সঙ্গীতকার নয়, রহমান কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন। এ আর রহমান ও তার ছেলে আমিনের জন্মদিন একই দিনে (৬ জানুয়ারি)।
এ আর রহমানের অস্কার জয়ী ‘জয় হো’ গানটি প্রথমে সালমান খানের ‘যুবরাজ’ সিনেমার জন্য তৈরি হয়েছিল। কিশোর বয়সে রহমানের বাজানো কী-বোর্ড-টি এখনও চেন্নাইয়ে তার স্টুডিওতে সাজানো রয়েছে।
২০১৪ সালে তিনি ৪টি জাতীয় পুরস্কার, ১৫টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন। সে বছর ১৩৮টি নমিনেশনের মধ্যে ১১৭টিতেই পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন রহমান। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে তিনিই প্রথম একই বছর দু’টি অস্কার জিতেছিলেন। এ আর রহমানের নামে কানাডার মরখমে একটি রাস্তাও রয়েছে।
খবর : আরটিভিঅনলাইন’র।
বিনোদন