নিজস্ব প্রতিবেদক »
জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি এসে গরম যেন আরো তেঁতে উঠেছে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। পথ চলতে হাঁপিয়ে উঠছেন পথচারীরা। রাস্তায় বিশেষ করে বয়স্কদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই সময়। গরমের মাত্রা এতো বেশি যে ঘরেও থাকাও দায় বলছেন অনেকে। আর এই তীব্র গরমের কারণে দেখা দিচ্ছে নানা রোগব্যাধি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এই গরম স্থায়ী হবে আরো ৪ থেকে ৫ দিন (১জুন থেকে ৫ জুন পর্যন্ত)।
নগরীর মুরাদপুরে গতকাল বেলা ২টায় ওভারব্রিজ পার হতে দাঁড়িয়ে আছেন মোজাম্মেল হক নামের ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘ওভারব্রিজ পার হওয়া অনেক কষ্ট। গরমে রাস্তা পার হতেই অনেক কষ্ট। তার উপর সিঁড়ি ভেঙে উঠতে গেলে বুক ব্যথা করে, শ্বাসকষ্ট হয়। বার বার গলা শুকিয়ে যায়। এরকম গরম আগে কখনও লাগেনি। যত দিন যাচ্ছে গরম আরো বাড়ছে। ঘরে থাকলে বিদ্যুৎ থাকেনা , বাইরে খাড়া রোদ। এই গরমে ঘরে-বাইরে টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে গেছে।’
১ বছর বয়সী শিশু মোস্তফা বিন আলী, বিদ্যুৎ গেলেই কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। মা লিজা আলী কিছুতেই তাকে শান্ত করাতে পারেননা। কিছুক্ষণ চলার পর, চার্জার ফ্যানের চার্জও একসময় শেষ হয়ে যায়। তীব্র গরমে ঘামাচিতে ছেয়ে গেছে শরীর। খাবার খেলেই হচ্ছে বমি।
ডাক্তারদের সংগঠন জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘এ সময় পানিশূন্যতা দেখা দিবে। তাই বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। এছাড়া ভাইরাল ফ্লুও দেখা দিবে। অতিরিক্ত গরমে খাবারও নষ্ট হবে। আর নষ্ট খাবার খেলে কিংবা পথের ধারে বা হোটেলের খাবার খেলে পেটের পীড়াও হতে পারে। বিশেষ করে গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস (অন্ত্রের সংক্রমণ) বা উদরাময় নামের রোগ হতে পারে। অতিরিক্ত ঘামে হতে পারে ঘামাচি বা স্কিন এলার্জি। এজন্য শিশুকে দিনে ১ বার অবশ্যই ভালোভাবে গোসল এবং ঠা-া পানিতে গা মুছিয়ে দিতে হবে। যদি গরম বেশি থাকে তাহলে সকালে একবার গোসল করিয়ে, বিকালে বা সন্ধ্যার দিকে হালকাভাবে আরেকবার গোসল করানো যেতে পারে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ পরিবারে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই; সেক্ষেত্রে থাকার ঘরে কাপড় ভিজিয়ে শুকাতে দিলে গরম কম অনুভূত হবে। টানা কয়েকঘণ্টা খাড়া রোদে থাকলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে রোদে টানা অবস্থান করা যাবেনা।’
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা শেখ-হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘এই তাপমাত্রা থাকবে আরো ৪ থেকে ৫ দিন। তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়ছে মনে হলেও এখনও চট্টগ্রামে মৃদু তাপপ্রবাহে পৌঁছায়নি। মৃদু তাপপ্রবাহে পৌঁছাতে হলে তাপমাত্রা ৩৬ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৮ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে হবে। বর্তমানে যে তাপমাত্রাটি চট্টগ্রামে রের্কড করা হয়েছে সেটি সর্বোচ্চ ৩৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনি¤œ ২৭ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি। এছাড়া যে তাপমাত্রা থাকবে তার চাইতে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি অনুভূত হবে কেননা বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে সামনে একটি লঘুচাপের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তবে লঘুচাপ নিয়ে এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছেনা।’
রাতে স্বস্তির বৃষ্টি
এদিকে দিনভর তীব্র গরমের পর রাতে এলো স্বস্তির বৃষ্টি। রাত সাড়ে আটটায় শুরু হওয়া এ বৃষ্টি প্রথমে অল্প থাকলেও পড়ে বাড়তে থাকে।
জামালখানের বাসিন্দা শ্রাবন্তী দেব বলেন, সারাটা দিন ছিলো তীব্র গরম। প্রয়োজন ছাড়া বাসার কেউ বের হয়নি। রাতে এলো স্বস্তির বৃষ্টি। দিন শেষে রাতের এমন বৃষ্টি গরমের মাত্রা কিছুটা হলেও কমবে।