আকবরশাহে পাহাড়কাটা
নিজস্ব প্রতিবেদক
বৃহত্তর আকবরশাহ এলাকার অসংখ্য পাহাড় কেটে এবং ছড়া-খাল দখল-ভরাট করে পরিবেশ ধ্বংস, পাহাড়ধসে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় মানববন্ধন করেছে মাদক, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুক্ষা আন্দোলন, আকবরশাহ কমিটি। এতে অংশ নেয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও আমরা আকবর শাহবাসীসহ স্থানীয় হাজারো মানুষ। পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মহানগর) হিল্লোল বিশ্বাসকে স্মারকলিপি দেন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
এসব অপকর্মের হোতা কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমসহ তার বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যামামলা ও তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে গতকাল রোববার বেলা ১২ টায় আকবরশাহ এলাকার পরিবেশ অধিদপÍরের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, বিগত ১০ বছর আগেও এই আকবরশাহ পাহাড়-ছড়া-খালের সুনিপুণ পর্যটন কেন্দ্র ছিল। পরিবেশ ছিল স্বস্তিদায়ক। চট্টগ্রাম নগরের পার্বত্য এলাকা হিসেবে আকবরশাহ ছিল নন্দিত। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলর জসিম ও তার বাহিনীর সরাসরি অংশগ্রহণে এবং প্রশাসনের কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে আজ এখানকার অসংখ্য পাহাড় নিশ্চিহ্ন। সর্বোচ্চ বিচার বিভাগের নিষেধাজ্ঞা, কয়েকটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এবং জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশ-নিষেধ অমান্য করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে এবং অর্জনকে অসম্মান করে এই ভূমিদুস্য ও অসংখ্য অপরাধের হোতা জহুরুল আলম জসিম এসব পরিবেশ বিধ্বংসী অপকর্ম করে যাচ্ছেন। তিনি সরকারি কালীর ছড়া খাল দখল করে গরুর খামার তৈরির পাশাপাশি প্লট আকারে খালের জায়গা বিক্রি করেছেন।
গণপূর্ত, রেল ও জেলা প্রশাসনের তথা সরকারি খাসজমি দখল করে দোকান, মার্কেট, বস্তি, কলোনি তৈরি করে এলাকায় রামরাজত্ব করেছেন। অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, লুটপাটসহ নানান অপরাধ নির্বিঘ্নে করতে এবং বিরোধী মতের মানুষদের মুখ বন্ধ করতে পরিচালনা করছে কোপা বাহিনী, ছুরি বাহিনী, অস্ত্র বাহিনী, কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী গ্রুপ। ছোট ছোট উঠতি কিশোর-তরুণদের এসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার দ্বারা পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করে বিক্রি করে দেয়ার ফলে গত বছর বর্ষা মৌসুমে একই পরিবারের ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু সবাইকে নাড়া দিয়েছিল। প্রশাসন তদন্ত করে তার জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ, পানি সংযোগ দিয়ে পাহাড়ে মানুষ বসানোর অপরাধেও তিনি জড়িত বলে আমরা পত্র-পত্রিকায় জেনেছি। মাত্র ৭-১০ বছরে এক সময়ের দরিদ্র এই জসিম কিভাবে আজ হাজার কোটি টাকার মালিক সে বিষয়েও পত্র-পত্রিকাগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সর্বশেষ জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিটি করপোরেশনকে ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে ব্যক্তি মালিকানা জায়গার উপর দিয়ে অবৈধ রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে ধসের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ১ জনের মৃত্যু ও ৪ জন আহত হয়েছেন। এর দায়ে তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা হওয়া উচিত। বারবার আকবরশাহকে দেশবাসীর কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের প্রধান কারণ এই ব্যক্তি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে, সিটি করপোরেশনকে ব্যবহার করে আকবরশাহ এলাকায় যে অবরাধকাণ্ড তিনি করে যাচ্ছেন তার এখনই প্রতিরোধ প্রয়োজন। তার এসব অপকর্মে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে দলের এবং সরকারের যে অর্জন তা প্রশ্নবিদ্ধ করছেন এই ব্যক্তি। তাকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি গ্রেফতার করা না হয়, আমরা প্রয়োজনে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি দেব।
আমরা অনতিবিলম্বে এই পাহাড়খেকোকে গ্রেফতার করে তার বাহিনী ও তাকে সহযোগিতাকারী প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে স্থানীয় নারী কাউন্সিলর নুর জাহান আক্তার রুবি বলেন, আমি এই এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কিন্তু আমিই জানি না ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কোথায় কি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যেখানে প্রকল্প নেয়া উচিত নয়, ব্যক্তিস্বার্থে প্রকল্প দেয়া হয়, সিন্ডিকেট করে প্রকল্পের অর্থ লুটপাট হয় সেখানে আমি প্রতিবাদ করি। সে কারণে আমাকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেনস্তা, অপদস্ত ও অপমান করেছেন অনেকবার। ওয়ার্ডে সমন্বয় করে কাজ করার কথা থাকলেও তা হয় না। নিজের ব্যক্তিগত কাজে সিটি করপোরেশনের অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি প্রতিটি প্রকল্পে নির্মাণ উপকরণ সিন্ডিকেট করে সরবরাহ করেন এই কাউন্সিলর।
মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেন ও বক্তব্য রাখেন উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক এবং আকবরশাহ থানা ও পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ অন্য নেতারা।
মাদক সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার মোর্শেদ কচির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন, সদস্যসচিব কাজী আলতাফ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক এরশাদ মামুন, মহিলা কাউন্সিলর নুরজাহান বেগম রুবি, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চট্টগ্রাম প্রধান মুনিরা রুবা, মাদক সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. লোকমান আলী, সদস্য সাহাবুদ্দিন আহমেদ জাহেদ, মোজাফ্ফর আহমেদ মাসুম, আব্দুল জব্বার, নিয়াজ আহমেদ, রুবেল ভান্ডারি, মিলি চৌধুরী, সবিতা বিশ্বাস, মো. জিয়াউল হক সুমন, মো. আবুল কাসেম, হাজী মোহাম্মদ ইউসুফ, দেলোয়ার হোসেন, জামাল আহমেদ, আবু সুফিয়ান, মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, শফিকুল ইসলাম মানিক, দিপ্তী রক্ষিত, জাহানারা বেগম রুজি, শর্মিষ্ঠা সেন, মো. রুবেল, মো. মানিক, রফিকুল ইসলাম টিটু, মো. সোহেল, মো. শামীম, মো. হানিফ সুমন, মো. হেলাল, মো. সাজ্জাদ, সাজ্জাদ মামুন প্রমুখ।