দায়িত্বের এক বছর : তাকে করা আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর জানালেন প্রেস সচিব

সুপ্রভাত ডেস্ক »

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাঁচ দিন পর, ১৩ আগস্ট তার প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ পান আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশ প্রধান শফিকুল আলম।

বুধবার (১৩ আগস্ট) তিনি দায়িত্বের এক বছর পূর্ণ করেছেন। এ উপলক্ষ্যে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দিয়ে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পোস্টে তিনি এই এক বছরে তাকে করা আলোচিত প্রশ্নগুলো এবং ওইসব প্রশ্নে তাঁর উত্তরও তুলে ধরেন।

শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘এটি ছিল এক অসাধারণ যাত্রা- একটি বিদেশি বার্তা সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন থেকে প্রতিদিনের আলোচনার কেন্দ্রে আসা পর্যন্ত। গত এক বছরে আমি প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখেছি। একই সঙ্গে আমাকে শূন্য থেকে এই পদটির দায়িত্ব ও কাঠামো তৈরি করতে হয়েছে, কারণ আগে এটি মূলত আনুষ্ঠানিক ছিল, বাস্তব কোনো দায়িত্ব ছিল না।’

তিনি লিখেছেন, ‘আমি কি ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করেছি? আমার বিশ্বাস, করেছি-যদিও আমার কিছু বন্ধুরা ভিন্নমত পোষণ করেন। তা ঠিক আছে; আমি তাদের মতামতকে সম্মান করি। আমি চাইতাম আরও ভালো করতে। আমার ভুলগুলো বেশিরভাগই সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে ছিল। কখনো দ্রুত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেছি, আবার কখনো প্রতিক্রিয়া জানানোই উচিত হয়নি। যোগাযোগ, অর্থনীতির মতো, প্রায়ই একে ‘বিষণ্ন বিজ্ঞান’ বলা হয়। এখানে কিছু নিয়ম আছে-কিন্তু বাস্তবতা সবসময় সেই নিয়ম মেনে চলে না।’

প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘আমার স্ত্রী, সন্তান ও ভাইবোনদের জন্য এ বছরটি ছিল কঠিন। তারা আমার পদটির সঙ্গে আসা চাপ ও নজরদারি সহ্য করেছে। আমি বন্ধু হারিয়েছি-এর মধ্যে সাংবাদিক সমাজের বন্ধুরাও আছে। কিছু তরুণ সাংবাদিক প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন, আমাকে “স্পিন ডাক্তার” হিসেবে দেখেছেন। কিন্তু আমি কোনো কিছু ঘুরিয়ে বলি না। সাদা মানে সাদা, কালো মানে কালো বলি। ব্যাখ্যার পার্থক্য মানে একপক্ষ মিথ্যা বলছে-এমন নয়।’

শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘এখানে গেল এক বছরে আমি যে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হয়েছি, সেগুলো তুলে ধরছি-

# হাসিনা ডাস্টবিনে ময়লা ফেলা কি প্রয়োজনীয় ছিল?

হ্যাঁ। তিনি ছিলেন এক নির্মম স্বৈরশাসক, আর জুলাই-উত্তর বাংলাদেশে তাকে তার অবস্থান বোঝানো জরুরি ছিল।

# আপনি কি বামপন্থীদের “বনসাই” বলেছেন?

না। আমি বলেছিলাম, তারা বাংলাদেশকে বনসাই আকারে রাখতে চায়।

# আপনার মেয়াদ শেষে কি রাজনীতিতে যোগ দেবেন?

না। আমি সাংবাদিকতায় ফিরে যাব, ইনশাআল্লাহ।

# আপনাকে কি লন্ডনে আক্রমণ করেছিল আওয়ামী সমর্থকরা?

কিছু মানুষ চ্যাথাম হাউসের বাইরে আমাকে উদ্দেশ করে স্লোগান দিয়েছিল। এটি ছিল যথাযথ পশ্চিমা ধাঁচের প্রতিবাদ-যেটি আমি চাইতাম তারা ১৬ বছরের ক্ষমতায় থাকাকালে আরও বেশি করুক। ঘেউ ঘেউ করা খুন করার চেয়ে ভালো।

# আপনি কি সরকারি মুখপাত্র, নাকি প্রেস সচিব?

হোয়াইট হাউস মডেল অনুযায়ী, প্রেস সচিব একই সঙ্গে প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব ও সরকারের মুখপাত্র। দায়িত্ব দুটি একে অপরের সঙ্গে মিশে থাকে।

# “স্টারমার কানাডা সফর করছেন” মন্তব্যটি কি ইচ্ছাকৃত ছিল?

না। প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্য সফরের প্রথম দিনে এক ব্রিটিশ এমপি তাকে বলেন, তিনি সন্দেহ করছেন স্টারমার কানাডায় আছেন। আমি প্রেসকে বলেছিলাম, তিনি “সম্ভবত” সেখানে আছেন। বিশ্লেষকরা ‘সম্ভবত’ শব্দটি বাদ দিয়ে দেন। আমার ভুল-বলবার আগে নিশ্চিত হওয়া উচিত ছিল।

# আপনি কি এই কাজ উপভোগ করছেন?

অবশ্যই। এটি ছিল এক বিশাল শিক্ষামূলক ভ্রমণ।

# চাপ অনুভব করেছেন?

না, তবে আমি চাইতাম দিনে ৩৬ ঘণ্টা থাকুক।

# আপনি আপনার সরকারের কার্যক্রমকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

এ++। ইতিহাস সদয় হবে। বড় সংস্কার চলছে, বিচার দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, আর এখন মূল লক্ষ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।

# আপনার দলকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

অগ্রদূত-ভবিষ্যতের প্রেস টিমের জন্য উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করেছে।

# আপনি কি এখন ধনী?

না। আমি আমার সঞ্চয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় করেছি।

# আপনার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা কী?

লাইভ ব্রিফিং বা টক শোতে ভুল কিছু বলে ফেলা-যেটি পরে আর ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই।