দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়

সাধারণ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতে উপজেলাসহ কয়েকটি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
আগামী ৯ মার্চ ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন হবে । একই দিন কয়েকটি পৌরসভাতেও ভোট হবে। কাছাকাছি সময়ে প্রথম ধাপে শখানেক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান কয়েকদিন আগে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আমরা এখনও পর্যালোচনা করছি এবং দেখছি। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে এবং ১২ মার্চে শেষ হবে। আবার ১০ বা ১১ মার্চ রোজা শুরু হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করতে হচ্ছে।’ প্রথম ধাপে শখানেক উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহণ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাকিগুলো কয়েকটা ধাপে মে মাসে করা হবে। কারণ জুন মাসে আবার এইচএসসি পরীক্ষা। এজন্য আমরা এই সময়টাকে কাজে লাগাতে চাই। জানা গেছে, ঈদের আগে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই কিছু সংখ্যক নির্বাচন হতে পারে । প্রায় ১০০ উপজেলার নির্বাচনের জন্য এ সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও জানা গেছে।
দেখা যাচ্ছে মাঝখানে রমজান ও ঈদের বিরতি দিয়ে কয়েকমাস দেশের মানুষ ভোট উৎসবে থাকবে। উৎসব বলার কারণটা হলো এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর যেসব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের ভোট হতে যাচ্ছে, তাতে দলীয় প্রতীক নৌকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত সোমবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের জরুরি কার্যনির্বাহী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে আমরা দলের প্রতীকের প্রার্থিতা দেব কি না, এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওয়ার্কিং কমিটির প্রায় সর্বসম্মত অভিমত যে, এবারকার উপজেলা নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রতীক নৌকা ব্যবহার না করা। নৌকা না দেওয়ার জন্য ওয়ার্কিং কমিটির সভায় সবাই অভিমত পেশ করছেন।’
২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন প্রণয়নের পর থেকে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। এ সময়ের পরের নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগও নৌকা প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে। তবে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সামনের উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ভোটে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ক্ষমতাসীন দলটি।
এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করি আমরা। কারণ দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচন করা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরক্তি ছিল। স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচন সবসময় দলীয় প্রতীকের বাইরে হয়েছে। অর্থাৎ এসব নির্বাচনে দল কাউকে মনোনয়ন দিতো না। এটা করতে গিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু করায় খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদেরই বিপাকে পড়তে হয়েছে। একজনকে প্রতীক দিলে আরেকজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। এতে দলীয় শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলে বিভেদ-বিভাজনও সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বিপাকে পড়তে হয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে। একেক নেতা একেক প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় কোথাও কোথাও পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে গড়িয়েছে। নয় বছর পর তৃণমূলের রাজনীতিতে বিভাজন ঠেকাতে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগ ভালো কাজ করেছে। তবে তা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে না হয়ে দেশের স্বার্থে সবসময়ের জন্য হয় সেটি নিশ্চিত করা উচিত।