দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে তিব্বতে বাঁধ হবে চীনের হাতিয়ার

তিব্বত থেকে প্রবাহিত প্রধান আন্তর্জাতিক নদীপথ। সংগৃহীত ছবি
আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় ভারতের মতো আঞ্চলিক শক্তিও চীনা প্রকৌশলের কাছে অসহায়। তার চেয়েও নিরুপায় একেবারে নিম্নাঞ্চলের বাংলাদেশ।

সুপ্রভাত ডেস্ক »

নবায়নযোগ্য শক্তির একটি বড় উৎস জলবিদ্যুৎ। এ শক্তি আহরণে সবচেয়ে এগিয়ে চীন। মানব ইতিহাসের নজিরবিহীন গতিতে নদী স্রোতের শক্তি কাজে লাগাতে দেশটি নির্মাণ করেছে ৮৭ হাজার ছোট-বড় বাঁধ।

বাঁধগুলো মোট ৩৫২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যা ব্রাজিল, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মিলিত উৎপাদনের চেয়েও বেশি।

অভ্যন্তরীণ প্রায় সব নদীপথে বাঁধ দেওয়ার পর, এবার আন্তর্জাতিক নদীগুলোতেও বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে চীন। এসব নদীর উৎপত্তিস্থল তিব্বত। হিমবাহের তুষারগলা জলধারাই নদীরূপে প্রবেশ করেছে অন্যান্য দেশে।

তিব্বতে উৎপন্ন নদীগুলোর ওপর জীবনধারণের জন্য নির্ভরশীল বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা। এই জল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে নিম্ন অববাহিকায় থাকা দেশগুলোর জন্য ইচ্ছেমতো শর্ত নির্ধারণ করতে পারবে চীন।

তিব্বতীয় মালভূমির গুরুত্ব তাই অপরিসীম। যেকারণে এ অঞ্চলকে এশিয়ার ‘ওয়াটার টাওয়ার’ বলা হয়। এই পার্বত্যভূমির তুষারগলা স্রোত সঞ্চিত করছে এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

প্রায় এক ডজন আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির উৎস তিব্বত। সরাসরি তিব্বত থেকে প্রবাহিত বড় নদীগুলো হলো: ইয়াংজি, পীত নদী (ইয়েলো), সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, ইরাবতি, সালউইন এবং মেকং।

৩০০ কোটির বেশি মানুষ এসব নদীর ওপর নির্ভরশীল। ভূ-রাজনৈতিক এদিকটি সত্যিই ভাববার বিষয়। কারণ নদী প্রবাহে সামান্যতম হেরফের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চক্র তৈরি করবে। ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল এ অঞ্চলে দেখা দিবে পরিবেশগত শরণার্থীর ঢল।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে সুপেয় পানির প্রধান উৎসই তিব্বতীয় মালভূমি।

উচ্চ অববাহিকার তিব্বতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থাকায় এ সম্পদের ভবিষ্যত সম্পূর্ণ নির্ভর করছে বেইজিংয়ের ওপর। এ অঞ্চল চীনকে দিচ্ছে সবচেয়ে বড় ভূ-কৌশলগত সুবিধা, যা কাজে লাগাতেও উৎসাহী বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটি।

জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে গত সাত দশকে অভ্যন্তরীণ প্রায় সব নদীপথে বাঁধ দিয়েছে চীন। বাঁধগুলোর ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ নাগরিক। তাদেরকে অন্যস্থানে বাসস্থান করে দিতে হয়েছে চীন সরকারকেই। সোজা কথায়, এই উন্নয়ন কাজে বিপুল অর্থের পাশাপাশি মানবিক মূল্যও কম ছিল না। তারপরও, গত ৪ দশকে ২০ গুণ বেড়েছে দেশটির জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প।

দিন দিন নবায়নযোগ্য শক্তির চাহিদা বাড়তে থাকায় চীনের আইনপ্রণেতারা নিচ্ছেন আরও বড় লক্ষ্য ।

তিব্বতের আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ওপর বড় প্রকল্প স্থাপন নিয়ে ভাবছেন তারা। এসব নদীতে ছোটবড় বাঁধ একেবারেই নেই তা নয়। তবে তা সীমিত। তিব্বতের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভাবনার মাত্র এক শতাংশই এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিন্তু, পরিস্থিতি পরিবর্তনের সাথে সাথেই পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আগ্রহ বাড়ছে।

যেমন- চীনজুড়ে অর্থনৈতিক বিকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে নগরায়ন ও শিল্পায়ন। তাল মিলিয়ে বেড়েছে বেইজিং এর নবায়নযোগ্য শক্তি চাহিদা। রাষ্ট্রায়ত্ত কিছু কোম্পানি তিব্বতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বেইজিং এর আইনপ্রণেতাদের কাছে দেনদরবার করছে। এরমধ্যেই অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ২৮টি প্রকল্প।

তিব্বতের আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ওপর ইতোমধ্যেই যেসব প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে; তাদের দিকে লক্ষ্য করলেই পাওয়া যায় আগামীদিনের ইঙ্গিত।

ব্রহ্মপুত্র এমনই একটি নদী। তিব্বতে এর নাম ইয়ারলুং সাংপো। এই নদী তিব্বত থেকে নেমে এসে ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হচ্ছে। তিব্বতীয় মালভূমির কৈলাস পর্বতের কাছে চেং ইয়ং ডং হিমবাহের উৎপত্তিস্থল থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত এ নদীর দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৩৯১ মাইল।

এককালের মুক্তভাবেই প্রবাহিত এ নদীর, প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ অংশে এখন বাঁধ দিয়েছে চীন ও ভারত। তবে ২০১৩ সালে চীন যখন এ নদীতে আরো তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের ঘোষণা দেয়, তখন সঙ্গেসঙ্গেই নিম্ন অববাহিকার ভারত পানি প্রবাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

চীনা আইনপ্রণেতারা সে সময় আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, প্রকল্পগুলো হবে ‘রান অব রিভার হাইড্রো-ইলেকট্রিক’ পদ্ধতির। এ ধরনের প্রকল্পে যেহেতু নদীর পানি ধারণে বড় আকারের জলাধার সৃষ্টি করা হয় না, তাই ভারতের চিন্তার কোনো কারণ নেই।

দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশই এর আগে আন্তর্জাতিক অনেক নদীতে এমন বাঁধ নির্মাণ করেছে। এ ব্যবস্থায় নদীর গতিপথ বদলে এর স্রোত সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত টারবাইনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। সেই স্রোত পরে গিয়ে মেশে মূল নদীতেই।

এই ব্যাখ্যা আশ্বস্ত করার মতোই, কারণ এতে নিম্ন অববাহিকায় পানি প্রবাহে তেমন ব্যাঘাত ঘটবে না বলেই মনে হয়। তবে বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা বা পাওয়ার গ্রিড সেভাবে কাজ করে না। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ওভারলোড হয়ে পড়ে পাওয়ারগ্রিড। তাই রান অব রিভার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পানি ধরে রেখে, বিদ্যুৎ চাহিদার সর্বোচ্চ সময়ে বা পিক আওয়ারে ছাড়ে। তাই নিশ্চিতভাবেই বড় প্রভাব পড়বে নিম্ন অববাহিকায়।

তাছাড়া, বাধের জলাধারে বিপুল পরিমাণ পানি সুর্যের তাপে বাস্পীভূত হয়, যার দাবিদার নিচু অঞ্চলের দেশ।

২০১৩ সালের পর ব্রহ্মপুত্রে আরো তিনটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ স্থাপন করেছে চীন। আগামীদিনে এ জলধারার বুকে অন্তত আরো এক ডজন বাঁধ নির্মাণ করতে চায়।

এসব বাঁধ নির্মাণ শেষ হলে জলপ্রবাহের পরিবর্তন নিম্ন অববাহিকার দেশে কৃষি ও পরিবেশগত ক্ষতি সৃষ্টি করবে। ফলে বিপন্ন হবে বাংলাদেশ ও ভারতে ১৩০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা।

চীনের জলবিদ্যুৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে ভারত প্রতিবাদ করলেও, দেশটি নিজে এ দোষমুক্ত নয়। ভারত নিজেও আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধ দিতে দ্বিধা করেনি। ব্রহ্মপুত্রের গতিপথে ভারত নিজেও বড় চারটি বাঁধ নির্মাণ করেছে। প্রস্তাবনা পর্যায়ে রয়েছে ডোয়াং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।

ভারতীয় আইনপ্রণেতারা ভারত ও চীনের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির হিস্যা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির কথা বার বার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, এই চুক্তির শর্ত মেনে চলা ঐচ্ছিক। নেই চুক্তি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার তৃতীয় কোনো আন্তর্জাতিক পক্ষ।

আইনি দিক থেকেও চীনের সাথে নিম্ন অববাহিকতার কোনো দেশের পানির হিস্যা নিশ্চিত করার বাধ্যতামূলক চুক্তি নেই।

১৯৯৫ সালে আন্তঃসীমান্ত নদী নিয়ে বহুপাক্ষিক একটি চুক্তি করার আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন। মেকং নদীর অববাহিকার দেশ: থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম এ চুক্তিতে সই করলেও- শেষমুহূর্তে পিছিয়ে আসে বেইজিং। চীন তখন জানায়, নিজ ভূখণ্ডে তারা প্রয়োজন অনুসারে উন্নয়ন কাজের অধিকার ধরে রাখতে চায়।

১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ প্রধান প্রধান আন্তঃসীমান্ত নদী পরিচালনায় একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির উদ্যোগ নেয়, কিন্তু তাতে ভেটো দেয় চীন।

ওই সময়ে চীনের অর্থনীতি ছিল আজকের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। স্বশাসিত হংকং এর অর্থনীতি ছিল চীনের মূল ভূখণ্ডের মোট অর্থনীতির ১৮ শতাংশ। অতীতে চীনের কাছে আজকের মতো আর্থিক সক্ষমতা ও রাজনৈতিক দৃঢ়তা কোনোটাই ছিল না। ফলে তিব্বতের আন্তঃসীমান্ত নদী নিয়ে করা বর্তমান সময়ের কোনো আন্তর্জাতিক কনভেনশনে চীন স্বাক্ষর করবে- এমন সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য।

আইনি এ বাধ্যবাধকতা না থাকাতেই ভারতের মতো আঞ্চলিক শক্তিও চীনা প্রকৌশলের কাছে অসহায়। তার চেয়েও নিরুপায় একেবারে নিম্নাঞ্চলের বাংলাদেশ। দ্রুত নগরায়ন, শিল্পায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব একসঙ্গে মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়াজুড়েই একারণে পানি নিরাপত্তার গুরুত্ব বাড়ছে।

একইসময় চীন তিব্বত ঘিরে জলবিদ্যুৎ নীতি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসায় সুপের পানির স্বল্পতা মারাত্মক রুপ ধারণ করবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ তিব্বতে হিমবাহ গলা পানির পরিমাণ বার্ষিক দুই-তৃতীয়াংশ হারে কমার আভাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ পরিবর্তন আন্তঃসীমান্ত নদী থাকা সব দেশে এক রকম হবে না। কিছু নদীতে পানি বাড়বে, হারিয়ে যাবে অন্য নদীগুলো। ফলে বন্যা বা ক্ষরার মুখে পড়বে এ অঞ্চলের কোটি কোটি জনতা।

পরিবেশগত এ প্রভাব এমন সময়ে হানা দিচ্ছে; যখন দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জনসংখ্যা সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছানোর অনুমান করা হচ্ছে।

যেমন ২০৫০ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যা বর্তমানের ১৯০ কোটি থেকে বেড়ে প্রায় ২৪০ কোটিতে উন্নীত হবে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় একইসময়ে বর্তমানের ৬৬ কোটি ২০ লাখ থেকে হবে ৭৯ কোটি ৪০ লাখ। তবে ১৪০ কোটিতে স্থিতিশীল থাকবে চীনের জনসংখ্যা।

তবে চীনে নগরায়ন হচ্ছে রকেটগতির। ১৯৭৮ সালে চীনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৮ শতাংশ শহরাঞ্চলে থাকতেন, ২০১৭ সাল নাগাদ যা ৫৮ শতাংশে পৌঁছে যায়। এ হারে চলতে থাকলে শহরবাসী চীনা নাগরিকদের সংখ্যা ২০৩০ সালেই ১০০ কোটিতে পোঁছাবে।

শহরে জনসংখ্যা বাড়ার অর্থই হলো পানির চাহিদা বৃদ্ধি। তাই এশিয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং চীনে নগরায়ন দুটি ঘটনাই পানির সম্পদের চাহিদাকে দেবে নতুন মাত্রা। এত চাহিদা মেটানোর মতো যথেষ্ট সরবরাহ যে ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে না এবিষয়টি প্রায় নিশ্চিত।

তার ওপর ১৯৫০ সাল থেকেই তিব্বতের উষর ভূমিতে বনায়ন বাড়িয়েছে চীন। এতে মাটির উর্বরতা ও বাতাসের মান উন্নত হয়েছে। সমৃদ্ধ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। অঞ্চলটিতে বর্তমানে সেচকাজই পানি ব্যবহারের প্রধান খাত, যার আওতায় এসেছে ৪০ শতাংশ ভূমি।

তিব্বতে এই সেচের পরিধি ও সবুজায়ন বাড়ায়, গাছেদের জন্য আরো পানির দরকার হবে আগামীতেও। অর্থাৎ, বনায়নের সেচ চাহিদা মানুষের অন্যান্য চাহিদার সাথে প্রতিযোগিতা করবে। নিম্ন অববাহিকায় এর প্রভাব সহজেই অনুমেয়।

জাতিসংঘের মতে, ২০২৫ সাল নাগাদ পানি সংকটে পড়বে ১৮০ কোটি মানুষ। সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে এশিয়া। স্থানীয়রা পানি স্বল্পতা বা সম্পূর্ণ অভাবের মধ্যে পড়বেন।

এই বাস্তবতায় তিব্বত নিয়ন্ত্রক চীনের আধিপত্য অন্যদের এড়িয়ে চলার উপায় নেই। পানি সম্পদ ব্যবহার করেই আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিকে ইচ্ছেমতো রূপ দিতে পারবে বেইজিং। এই সম্পদ অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা হবে এমন সম্ভাবনাই বেশি।

এরমধ্যেই মেকং নদীর তিব্বতীয় অংশে সাতটি বাঁধ নির্মাণ করেছে চীন। পরিকল্পনা রয়েছে আরো ২১টি বাঁধ নির্মাণের। ফলে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীন-বিরোধী জোটে যেতে চায় না ভিয়েতনাম। থাইল্যান্ড, লাওস ও কম্বোডিয়ার মতো দেশও প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই তারা চীনের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতেই উৎসাহী।

তাদের অজানা নয়, নদীর উৎসে সামান্যতম পরিবর্তন তাদের কৃষি ও মৎস উৎপাদন, মিঠা পানির প্রাপ্যতাকে ব্যাহত করবে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে এসব দেশে দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা জনসংখ্যা।

সালউইন নদীর তিব্বত অংশেও আরেকটি বিশাল বাঁধ দিয়েছে চীন। কাজ চলছে আরো বেশ কয়েকটি বাঁধের। নিম্ন অববাহিকয়ার মিয়ানমারের জন্য যা বড় ঝুঁকি। চীন পানিপ্রবাহ কমালে সমুদ্রের লোনা পানি উপকূলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। এতে ধবংস হবে বিপুল কৃষিজমি।

তবে নিম্ন অববাহিকতার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা বাংলাদেশের। আমাদের প্রধান দুটি জলধারা- ব্রহ্মপুত্র এবং পদ্মা (গঙ্গা) দুটিরই উৎপত্তি তিব্বতে। এরমধ্যেই ভারতের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কারণে বাংলাদেশে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নেই। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে লোনা পানির অনুপ্রবেশও বেড়েছে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। দক্ষিণাঞ্চলে আবাদি জমি ও মাছের ঘের হারিয়ে জলবায়ু শরণার্থী হচ্ছেন লাখো মানুষ।

প্রতিবেশীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রতিবেশী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী সব চাপ সহ্য করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আগামীতে মিয়ানমার থেকে জলবায়ু শরণার্থীর ঢল আসবে এমন ঝুঁকিও রয়েছে।

সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর / কাস্পিয়ান রিপোর্ট