ফারুক হোসেন সজীব »
আজ তিতলির জন্মদিন। সকালেই সে উঠে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকালো। বাতাস ঠাণ্ডা, সূর্য হালকা আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিতলির মনটা আজ প্রাণবন্ত ফুরফুরে! কারণ আজ তার বিশেষ একটি দিন। সে ভীষণ খুশি। মনে মনে ভাবছে, আজকের দিনটা আমি কিভাবে উদযাপন করব? প্রথমে সে ভাবলো, বড় একটি কেক কিনে বন্ধুদের সঙ্গে বসে কেটে খাবে। বন্ধুদের মুখে হাসি ফুটবে। সবাই খুশি হবে! কিন্তু তারপর হঠাৎ মনে হলো, তাকে আরও ভালো কিছু করতে হবে। সে ভাবলো, আমার জন্মদিনের আনন্দ আমি সবার সাথে ভাগ করে নিতে চাই। এমন কিছু করতে হবে যা অনেকের উপকারে আসবে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তিতলির মনে একটি সুন্দর পরিকল্পনা এলো। সে মনে মনে ভাবলো, আমি পথশিশুদের জন্য শীতবস্ত্র কিনব! শীতকালে পথশিশুরা খালি গায়ে শীতে অনেক কষ্ট পায়। তিতলি যখন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে তখন সে দেখতে পায় পথের ধারে খালি গায়ে উলঙ্গ শিশুরা শুয়ে বসে আছে। তারা শীতে কাঁপছে। যদি সে তাদের একটি করে শীতবস্ত্র দেয় তবে তারা এই শীতে আরামে থাকতে পারবে। তিতলি আর দেরি করলো না, সে দৌড়ে আব্বু-মাম্মুর কাছে গেল। তিতলির চোখে মুখে উজ্জ্বল-হাসি। তিতলি বলল, আম্মু আব্বু! আজ আমার জন্মদিন। আমি শুধু আনন্দ চাই না। আমি চাই অন্যরাও খুশি থাকুক। তাই আমি ভেবেছি, পথশিশুদের জন্য শীতবস্ত্র কিনে সবাইকে একটি একটি করে দেব। এই শীতে পথশিশুরা কত্ত কষ্ট পাচ্ছে। তিতলি কথা শুনে আব্বু-মাম্মু ভীষণ অবাক হলেন। আম্মু বললেন, তিতলি! তুমি সত্যিই অসাধারণ চিন্তা করেছ। আব্বু খুশি হয়ে বললেন, আমি অবশ্যই তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ করবো। আব্বু আম্মু আর দেরি করলেন না। সঙ্গে সঙ্গে তিতলিকে নিয়ে বাজারে চলে গেলেন। দোকান থেকে রঙিন কম্বল, সোয়েটার, জ্যাকেট এবং হাতমোজা ইত্যাদি কিনলেন। এত শীতবস্ত্র দেখে তিতলি ভীষণ অবাক হয়ে গেল। তিতলি মনে মনে ভাবল, এই শীতের পোশাকগুলো পরলে ওদের দারুণ মানাবে। সেই সাথে উষ্ণতাও দেবে। তিতলি আব্বু আম্মু সাথে পোশাকগুলো প্যাক করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। তিতলি দেখতে পেল পথের ধারে অনেক পথশিশুরা শীতে কাঁপছে। তিতলি তাদের কাছে গিয়ে বলল, তোমাদের কি শীতবস্ত্র দরকার? তিতলির কথা শুনে সবাই ম্লান হাসলো। পথশিশুরা কিছুটা ভয় পেলেও তিতলির হাসি দেখে তাদের মুখে উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়ল। হ্যাঁ! আমাদের সবার শীতবস্ত্র দরকার। একটি শিশু বলল, আপুমণি, আমাকে একটি শীতবস্ত্র দাও! শীতে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। তিতলি প্যাকেটগুলো খুললো তারপর সবাইকে একটি একটি করে শীতবস্ত্র দিতে লাগল। জ্যাকেট, সোয়েটার, কম্বল যা কিছু ছিল সমস্ত কিছু তাদের দিয়ে দিল। পথশিশুরা শীত বস্ত্র এবং পোশাক পেয়ে ভীষণ খুশি হলো। শুধু কি তাই! তারা তিতলির আব্বু আম্মুকে সালাম পর্যন্ত করতে চাইল কিন্তু আব্বু আম্মু তাদের সবাইকে বুকে টেনে নিলেন। এমন দৃশ্য দেখে তিতলি ভীষণ খুশি হলো। খুশিতে তিতলি লাফাতে লাগল। সত্যি এবারের জন্মদিনে তিতলি অন্যরকম আনন্দ উপভোগ করলো। সেই সাথে তিতলি বুঝতে পারল, অপরের মুখে হাসি ফোটানের চেয়ে পরম আনন্দ আর নেই। তারপর তিতলি পথশিশুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আব্বু আম্মুর সাথে আনন্দে খুশিতে বাড়ি চলে গেল! সেই সাথে তিতলির এই ত্যাগ আমাদের সবার জন্য এক অপূর্ব আদর্শ শিক্ষা হয়ে রইলো!





















































