রুশো মাহমুদ »
সিআরবির শিরিষতলায় বইমেলার নতুন ভেন্যুতে পাঠক সমাগম বেশ ভালোই। আগে মেলা হতো এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে। এবার বইমেলার জন্য চমৎকার স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। আয়োজকরা ধন্যবাদ পাওয়ার মতো কাজ করেছেন নিঃসন্দেহে। সবুজ প্রকৃতির মাঝখানে বইয়ের এমন কেনাকাটা, ব্যাপারটা মোটেও সাধারণ না।
বইমেলা একদিকে পুস্তকের আড়ত, অন্যদিকে মিলনেরও কেন্দ্র। তবে মেলা শুধু বেড়ানোর জায়গা বা সেলফি জোন হয়ে উঠলে বই প্রকাশনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
প্রকাশকদের ভালো বই প্রকাশে আরও গুরুত্ব দেয়া দরকার। বই সম্পাদনার ওপর বিশেষভাবে জোর দিতে হবে। প্রকাশকদের অবশ্যই বই প্রকাশের জন্য সম্পাদকমণ্ডলী বা সম্পাদনা পরিষদ থাকা দরকার। বই বাজারে আসার পূর্বশর্ত হতে হবে সুসম্পাদনা। তা না হলে পাঠকদের হাতে ভালো বই তুলে দেয়া যাবে না। পাইরেটেড, মানহীন বইকে মেলায় স্থান দেয়া উচিত নয়। মানসম্মত বই এখন সময়ের দাবি।
পড়ার চর্চা কমছে, দেখার আকর্ষণ বাড়ছে। নানা ডিভাইসে মেতে আছে ছেলেমেয়েরা। পড়ার আগ্রহ কমার এটা একটা বড় কারণ। বইমুখী করাটা জরুরি। বই কখনো সিগন্যাল হারায় না, চার্জও কমে যায় না। বই বরং প্রতিটি পৃষ্ঠায় আমাদের নতুন পৃথিবীতে নিয়ে যায়।
আমি যা পেতে চাই, ইন্টারনেট আমাকে তা-ই দেয়। কিন্তু বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আছে চমক, যা আমি খুঁজিনি বা ভেবেও দেখিনি, কিন্তু চারপাশের পৃথিবীকে বোঝার জন্য যা জরুরি, বই আমাকে তা-ই দেয়।
বই পড়ার আগের আমি আর পরের আমি, আলাদা দুজন মানুষ। আগের মানুষটির চেয়ে পরের মানুষটি পৃথিবীকে বুঝতে পারেন আরও অর্থপূর্ণভাবে।
বই পড়া থেকে আনন্দ, বুদ্ধি ও সক্ষমতা অর্জিত হয়। বই পড়তে পড়তেই অবসর হয়ে ওঠে নির্মল আনন্দের। বুদ্ধি আসে বইয়ের কথামালা থেকে, আর সক্ষমতা আসে গ্রন্থগত বিদ্যার সঙ্গে বিষয়বুদ্ধির সংশ্লেষে। প্রাকৃতিক দক্ষতা হলো উদ্ভিদের মতো, কেটেছেঁটে যত্ন নিতে হয়। বই সেই পরিচর্যার কাজটি করে।
বই কিনুন। পড়ার সময় না হলেও কিনুন। বই অনন্তযৌবনা। বছরের পর বছর পার হলেও বইয়ের বয়স বাড়ে না। আগের মতোই পড়া যায়। তাই বই কিনুন, হাত ভর্তি করে বই নিয়ে যান বাড়িতে।
যেসব শিশু তাদের বাড়িতে বইয়ের বিশাল সংগ্রহ দেখে বড় হয়, তাদের মধ্যেও আপনাআপনি বই পড়ার প্রবণতা চলে আসে। পড়া বাদেও, বই সংগ্রহ করাকে নেশায় পরিণত করুন।
বইয়ের ছোঁয়ায় সবকিছু আলোকিত হয়ে উঠুক।