সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে একমত হয়েছেন দুই রাজনৈতিক নেতা। বৈঠক শেষে টুইট করেও বাংলাদেশ-ভারতের এই সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় প্রকাশ করেছেন ভারত নেতা নরেন্দ্র মোদি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয়েছে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় নয়াদিল্লির লোককল্যাণ মার্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খবর সারাবাংলা।
বৈঠকের তথ্য জানিয়ে টুইটারে পোস্ট দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় কানেক্টিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও একান্ত বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের অনিষ্পন্ন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার পাশাপাশি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মোদি।
হাসিনা-মোদির দ্বিপক্ষীয় এবং একান্ত বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান, হাসিনা-মোদি বৈঠকে তিস্তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তবে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। কিছুক্ষণ তারা একান্তে আলোচনা করেছেন। এই একান্ত আলোচনায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কী না- সে বিষয়ে কিছুই জানেন না মোমেন।
মোমেন আরও বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করেন। জি২০-র আমন্ত্রণের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
গ্লোবাল সাউথের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়কে জি২০তে তুলে ধরার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদিও জি২০তে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার জন্য হাসিনাকে সাধুবাদ জানান।
মোমেন বলেছেন, শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেছেন, ভারত হলো বাংলাদেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার। ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধও তিনি মোদিকে করেছেন।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ বৈঠক বিষয়ে ব্রিফ নোটে জানিয়েছে, উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ এবং ভারতের বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এই সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একমত হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, গত বছরের ০৪-০৮ সেপ্টেম্বর তারিখে নয়াদিল্লিতে তাঁর সফল রাষ্ট্রীয় সফরের পর দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানাবিধ ক্ষেত্রে প্রভূত দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এই জন্য উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের কথা ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের মধ্যকার অনিষ্পন্ন বিষয়সমূহ অফিসিয়াল পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ব্রিফ নোটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন বিষয়ে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
ভারতের সঙ্গে ৩ সমঝোতা স্মারক: প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের প্রাক্কালে দুই দেশের মধ্যে ৩টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
তিনটি সমঝোতা স্মারক হল : কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্থিক লেনদেন সহজীকরণ।
এর মধ্যে বাংলাদেশে এগ্রিকালচার রিসার্চ কাউন্সিল এবং ইনডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার রিসার্চের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় দুই দেশের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ খাতে সহযোগিতা জোরদার করা হবে।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২০২৩ থেকে ২০২৫ সময়ের জন্য। এর আওতায় শিল্প, সহিত্য, সাংস্কৃতি খাতে দুদেশের সহযোগিতা আরো জোরদার করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আর তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি হয়েছে ভারতের এনপিসিআই ইন্টারনশনাল পেমেন্টস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে লেনদেন সম্পাদন সহজতর হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার নয়াদিল্লিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী শ্রীমতি দর্শনা জারদোশ।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রওনা হন তিনি। নয়াদিল্লিতে ৯-১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এ সফর।
প্রসঙ্গত, ভারতে হতে যাওয়া এবারের জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৯টি দেশকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হচ্ছে—মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিংগাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভারতের মধ্যে বিদ্যমান নানা সম্পর্কের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ এর দুটি পৃথক অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।