ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত

সুপ্রভাত ডেস্ক »

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা চায় বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার রোডম্যাপ স্পষ্ট না করলে রাজপথে নামবে বলে জানিয়েছে দলটি। গত সোমবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দলটির নেতারা বলেছেন, কয়েক মাস ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বারবার এ দাবি জানানো হচ্ছে। বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও একই দাবি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। বরং সরকারের দু-একজন উপদেষ্টার বক্তব্য বিষয়টিকে আরও জটিল ও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন করে তুলেছে বলে অভিমত বিএনপি নেতাদের। এ প্রেক্ষাপটে রোডম্যাপ ইস্যুতে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখবে দলটি।

বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, তারা এ সরকারকে সহযোগিতা করতে চান, যাতে সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। তবে দলটি মনে করে, সরকারের রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একসঙ্গে চলতে পারে। এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ, বিএনপিও প্রয়োজনীয় সংস্কার চায়। এ জন্য দলটি সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে সহমতও পোষণ করেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে তারা  সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত। এ জন্য সরকার ঘোষিত ১০টি কমিশনের পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকেও ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেটাকে তারা শ্যাডো (ছায়া) কমিটি বলছেন। এসব কমিটির সুপারিশমালা তারা সরকারকে দেবেন।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা অব্যাহত থাকবে। তাদের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখায়ও সংস্কারের কথা বলা আছে। তবে দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা এখন ভোট দিতে উদগ্রীব। জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায়। তাই সরকারের উচিত, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রশাসন এবং বিচার বিভাগকে প্রাধান্য দিয়ে সংস্কার কার্যক্রম চালানোর জন্য বলা হয়েছিল। বিএনপি নেতারা বলেছেন, সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি যদি একসঙ্গে চলে, তাহলে দেশবাসী মনে করবে সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সরকার সে পথেই হাঁটছে। কিন্তু তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না।

এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। মেয়াদের তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও সরকার এখনও রোডম্যাপের বিষয়টি স্পষ্ট না করায় নির্বাচন নিয়ে আসলে তাদের চিন্তা কী, অথবা নির্বাচন ছাড়া তারা কত দিন ক্ষমতায় থাকতে চায়, কিংবা ক্ষমতা ও নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করতে চায় কিনা– এটা নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নেতারা বৈঠকে তাদের এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, সরকার সংস্কারের কথা বললেও নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। তারা সরকারকে অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানান।

সম্প্রতি নির্বাচন নিয়ে সরকারের দু-একজন উপদেষ্টা যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না বিএনপি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উশখুশ করছেন– অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে গত রোববার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

এদিকে গত সোমবার নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন অ্যারাল্ড গুলব্রান্ডসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির নেতারা উপদেষ্টার এ বক্তব্যের ঘোরতর আপত্তি জানান। সরকার নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চায় কিনা– তাঁর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সে বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটি তাঁর পদত্যাগ চায়। কারণ, আলী ইমাম মজুমদারকে বিতর্কিত কর্মকর্তা মনে করেন তারা। সে কারণে তাঁকে সরকারে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে অভিমত নেতাদের।

বৈঠকে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি জোরালোভাবে পালনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাকে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক আকারে তুলে ধরারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।