ডিম ও মুরগির বাজার চড়া

সরকার নির্ধারিত দরে মিলছে না নিত্যপণ্য

রাজিব শর্মা »

সরকারের পক্ষ থেকে খুচরা পাইকারি ও উৎপাদন পর্যায়ে ডিম, মুরগির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও নির্ধারিত ঐ দরে বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা।

বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা আর প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। অলিতে গলিতে খুচরা দোকানগুলোতে এর চেয়ে বেশি দরেও বিক্রি হতে দেখা যায়। সেই হিসেবে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে প্রায় ১৫ টাকা। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শুক্কুর বলেন, সরকার ডিমের দর নির্ধারণ করলেও ঐ দরে দেশের কোথাও বিক্রি করছে না। আমারা পাইকারিতে প্রতি পিস ডিম বিক্রি করছি ১২ টাকা ২০ পয়সা। সরকারের ১১ টাকা ০১ পয়সা দরে আমার কিনতে পারছি না। সরকারের তদারকি প্রতিষ্ঠান তদারকি করে দেখতে পারে।

অন্যদিকে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৯০ টাকায়। যা নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে ১০ টাকার বেশি। একইভাবে সোনালি মুরগির প্রতি কেজির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়, যা নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেশি।

বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার রেয়াজউদ্দিন ও বকসিরহাট ঘুরে এসব পণ্যের দরে বাড়তি চিত্র দেখা যায়।

নিত্যপণ্যের দামের কোন পার্থক্য না আসাতে ক্রেতারা অনেকটা বাজার মনিটরিং ও ব্যবসায়ীদের দায়ী করলেও দাম বাড়তির কারণ হিসেবে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করছে বলে মন্তব্য করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

রেয়াজউদ্দিন বাজারে আসা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মো. শরিফুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে মানুষ অতিষ্ট ছিল। এ সরকারের আমলেও বাজার দরের কোন পরিবর্তন নেই। প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা বাজার তদারকি করতো এখন তেমন কোন সংস্থাকে দেখা যায় না। যাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের মনগড়া দরে পণ্য বিক্রি করছে।

একই বাজারে আসা মো. আশরাফ নামের এক ব্যক্তি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ডিম ও মুরগির দর নির্ধারণ করে দিলেও কোন ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। এখনো ডিম বিক্রি করছে ১৬৫ টাকার চেয়ে বেশি। ব্রয়লার বিক্রি করছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা দরে। সরকার দর নির্ধারণ করলেও তা তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের মনগড়া দরে মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

মুরগির দাম বাড়তির বিষয়ে জানতে চাইলে বাজারের বাবুল চিকেন হাউসের মালিক মো. বাবুল বলেন, এ সপ্তাহে পোল্ট্রি পর্যায়ের খামারিরা মুরগি কম সরবরাহ করেছে। সরকার দর দিলেও ঐ দরে পাইকাররাও বিক্রি করছে না। দরের বিষয়ে আপনারা পাইকারদের সঙ্গে কথা বলুন।

এদিকে মুরগির দাম বাড়তির বিষয়ে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুরগি ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য মোজাম্মেল হক বলেন, সরকার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিলেও ঐ দরে খামারি পর্যায়ে আমাদের দিচ্ছে না। আমরা খামারি পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগি ছোট সাইজের ১৭২ টাকা ও মাঝারি সাইজের ১৭৭ টাকা দরে কিনেছি। আমাদের সকল খরচ সমন্বয় করে হিসেব করলে পাইকারিতে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০ টাকার ওপরে। সরকারকে তদারকি করতে হবে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোকে। এসব কোম্পানিরা বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করছে।

এছাড়া বাজারে শুধু ডিম ও মুরগি না, সবজি, মাছসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের বাড়তি চিত্র দেখা যায়।

গত সপ্তাহে গরু ও খাসির মাংসের দাম ৫০ টাকা কমতি দেখা গেলেও এ সপ্তাহে আবার আগের বাড়তি দরে ফিরেছে। বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকায় ও খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকায়।

তাছাড়া গত সপ্তাহের চেয়ে বাজারে মাছের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী দাম কমেনি। বরং নানা ইস্যু দেখিয়ে বিক্রেতারা মাছ বিক্রি করছে চড়া দরে। মাছ ব্যবসায়ী শিমুল দাস বলেন, সমুদ্রের মাছের সরবরাহ বাড়লেও বাজারের দর নিয়ন্ত্রণ করছে বড় ব্যবসায়ীরা। বাড়তি দরে কিনতে হয়েছে, যার কারণে দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

বাজারে মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা, আর ২০০ গ্রাম ওজনের জাটকা বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া রুই, কাতলা মাছ ৩৬০ থেকে ৫৮০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, কাঁচকি ৫০০ টাকা, কৈ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির সরবরাহ বাড়লেও প্রায়সব সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে।

বাজারে ভারতীয় টমেটো ১৫০ টাকা, দেশি গাজর ৯০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৯০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৯০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করল্লা ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা। কিছুটা কমেছে আলুর দাম। দেশী গোল আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও মুন্সীগঞ্জের আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বেড়েছে কাঁচামরিচ ও ধনেপাতার দাম। বাজারে কাঁচামরিচ ২৪০ ও ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

সবজি বিক্রেতারা বলেন, সরবরাহ বাড়লেও ফলন নষ্ট হওয়াতেই পাইকারি ওআড়ত পর্যায়ে কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। বাজারে কাঁচামরিচ ও ধনেপাতার সরবরাহ কমাতেই দাম বাড়তির দিকে।

এদিকে, গত দেড় মাস ধরে মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে বড় মুগ ডালের দাম কেজিতে কমেছে ২০ টাকা এবং এলাচির দাম কমেছে ৩০০ টাকা। আর কালো গোল মরিচের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেশারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১৩০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১১৫ টাকা মাশকলাইয়ের ডাল ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া এলাচি ৪ হাজার ২০০ টাকা, দারুচিনি ১৫০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৬০০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।