ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কারা

ডিমের বাজারে অরাজকতা থামছেই না। পাইকারি হিসেবে প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ে ১৩৬ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে ডজনে ১৮ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সকালে এক দাম তো বিকেলে আরেক দাম। এক বিক্রেতা বলেন, আমরা সকালে ডিম বিক্রি করেছি ১৫০ টাকায়। বিকেলে বিক্রি করেছে ১৫৫ টাকায়। পাইকারিতে বাড়ছে তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
উৎপাদন বাড়ার পরেও কমছে না ডিমের দাম। এখন আলুর মতো বিভিন্ন কোল্ডস্টোরেজে ডিম মজুদ করে রেখে সংকট তৈরি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি, চাঁদপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোল্ডস্টোরেজে ডিম সংরক্ষণ করা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় সেই ডিম।
এক ক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, এক হালি ডিম কিনতে এখন খরচ পড়ছে ৫০ টাকার বেশি। বাজারে মাছ মাংসের দামের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অথচ আমাদের প্রশাসনের কোনো সাড়া শব্দ নাই।
পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে বেশিরভাগ ডিমের সরবরাহ হয় টাঙ্গাইল থেকে। সরবরাহ টাঙ্গাইল থেকে হলেও বাজারের নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকার তেজগাঁও সমিতি। তারা সারা দেশের ব্যবসায়ীদের কত টাকা দরে ডিম বিক্রি করবেন, সেটি জানিয়ে দেন। সেই মতে বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়া একটি ফেসবুক পেজে প্রতিদিন কত দামে পাইকারিতে ডিম বিক্রি হচ্ছে সেই তথ্য জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাইকারি দামকে অনুসরণ করে খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দেন। বর্তমানে পাইকারিতে ১০০ পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৪০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ১১ টাকা ৪০ পয়সা। গত দ্ইুদিন আগে চট্টগ্রামের ডিমের চাহিদা কমার কারণে প্রতি পিস দাম ১০ টাকা ৮০ পয়সায় নেমে আসে। এদিকে খুচরা বাজারে সোমবার সেই ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১৫৫ টাকা। প্রতি পিসের দাম পড়েছে ১২ টাকা ৯১ পয়সা (প্রায় ১৩ টাকা)। অর্থাৎ পাইকারির তুলনায় প্রতি পিস ডিম দেড় টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে একে ওপরের কারসাজিকে দায়ী করলেও প্রশাসন কার্যত তেমন কিছুই করতে পারছে বলে মনে হয় না। আর দাম বাড়ার কারণগুলোও তেমন যৌক্তিক নয়। গরমে ডিম আগেও নষ্ট হতো, এখন যেমন হয়। তা সত্ত্বেও কয়েকবছর আগেও ডিমের বাজার এমন অস্থির ছিল না। ফার্মের মুরগি ও ডিমের দাম কেন বাড়ে, কারা বাড়ায়, কীভাবে বাড়ায় সেটা একটি গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার যখন ইচ্ছে দাম বাড়ায়। এরজন্য তাকে কোথাও কখনো জবাবদিহিও করতে হচ্ছে না।
এই অরাজকতার অবসান হওয়া উচিত। আর কতকাল সাধারণ ভোক্তারা অধিক মুনাফাখোরদের লোভের শিকার হয়ে থাকবে।