বিশ্বের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের প্রাচীনতম ও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো ডাক। চিঠির মাধ্যমে খবর ও সংস্কৃতির আদান প্রদান যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে। ফলে ডাকের এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৩ সালের ০৭ ফেব্রুয়ারী “ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (UPU)” এর ১৪৭ তম সদস্যপদ পাওয়া বাংলাদেশও গতকাল যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়েছে।
ইউপিইউ’র ২০২২ সালের “পোস্টাল জার্নি টুওয়ার্ডস এ সাসটেইনেবল ফিউচার” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে ডোমেস্টিক পার্সেল ভলিউম দ্রুত বাড়ছে ফলে আইসিটিবেজড লজিস্টিকস ও সার্ভিস ডেলিভারি সিস্টেম ছাড়া সেবা প্রদান ধরে রাখতে সমস্যা হবে।
এশিয়ার বহু রাষ্ট্র যেমন ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কার IT 2.0 / APT 2.0, ক্লাউড মাইগ্রেশন ও অ্যাপভিত্তিক ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন, COD, OTP ভিত্তিক ডেলিভারি, রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং, ডিজিটাল পেমেন্ট ইন্টিগ্রেশন-এর মতো উদ্যোগসমূহ গ্রাহকের আস্থা বাড়াচ্ছে এবং প্রাইভেট কুরিয়ারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সহজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আস্থাশীল ডাক বিভাগ গঠনে আইসিটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাশ্রয়ী সেবা নিশ্চিত করতে আইসিটির ভূমিকাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে ডিজিটাল অটোমেশনের মাধ্যমে পত্র, পার্সেল ও আর্থিক লেনদেনের প্রক্রিয়া কম্পিউটারভিত্তিক করলে সময় ও জনবল খরচ কমে, ফলে সেবা আরও সাশ্রয়ী হয়। ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং, পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, ও অনলাইন বিল পেমেন্ট চালু থাকলে গ্রাহককে আর অফিসে যেতে হয় না ফলে সময় ও যাতায়াত ব্যয় দুই-ই সাশ্রয় হয়। ডিজিটাল রুট পরিকল্পনায় (Route Optimization) আইসিটি ব্যবহার করে ডাকপিয়নের পথ নির্ধারণ করা গেলে জ্বালানি ও সময় বাঁচে খরচও কমে।
দেশে এখন প্রচুর কুরিয়ার সার্ভিস চালু হয়েছে। চালু হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। এদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না ডাক বিভাগ। কাজেই সেবা প্রদানের ধীরগতি ও পুরোনো অবকাঠামো হতে বের হয়ে আইসিটি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা ঘুচিয়ে ডাক বিভাগকে এখন আইসিটিতে শক্তিশালী হতে হবে। গ্রামীণ এলাকাগুলোতে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো দুর্বলতার উত্তরণ ঘটাতে হবে।
আইসিটিকে উপেক্ষার মনোভাবের উন্নয়ন ঘটিয়ে কর্মীদের আইসিটি দক্ষতা বাড়িয়ে ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার অভ্যস্ততা তৈরি করে গ্রাহকসেবার মনোভাব বাড়াতে হবে যেন গ্রাহকের আস্থার সংকট তৈরি না হয়। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বেসরকারি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন দ্রুত, ট্র্যাকযোগ্য ও ঘরে পৌঁছে দেওয়ার সেবা দিচ্ছে তেমন আইসিটিবেজড সেবা দিতে হবে।
আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি পার্সেল বা চিঠি রিয়েল-টাইমে ট্র্যাক করার ব্যবস্থা গ্রাহকের মনে নিরাপত্তা ও আস্থা তৈরি করে। এগুলো সব কিছু অর্জনের জন্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইসিটিবেজড ডাক বিভাগ এখন সময়ের দাবী।