চমেক হাসপাতাল
বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘ঠাণ্ডা নাকি মাথায় উঠছে, বুকে ঠাণ্ডা জমে আছে, নিউমোনিয়া, জ্বর কমাতে পারছে না’ কান্নায় এসব কথা বলছিলেন লোহাগাড়া থেকে আসা ১০ মাসের শিশুর দাদী মিরাজু বেগম। মিরাজু বেগমের মতো এমন অনেক স্বজনের চোখে-মুখে কান্না ও কষ্টের চাপ। গতকাল বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) ৯ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গেলে এমন চিত্র চোখে পড়ে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ। প্রতিটা বেডে দ্্ুই থেকে তিনজন করে শিশু। আবার অনেকে বেডে জায়গা না পেয়ে নিচে কোন রকমে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে।
রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলা থেকে আসা রোগীর বাবা জন্টু নাথ বলেন, ‘আমার ৮ মাসের শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে এইখানে নিয়ে আসি, রোগীর সংখ্যা বেশি তাই সেবা পেতে একটু কষ্ট হচ্ছে, শিশুর অবস্থা আগের থেকে খানিকটা ভালো হয়েছে’।
রাউজান থেকে আসা রোগীর স্বজন আবুল হাসান জানায়, বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ঘুরে বাচ্চা নিয়ে এখানে এসেছি, রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই যাচ্ছে, ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম, সময় মতো সেবা পেতে কষ্ট হচ্ছে।
চমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আক্রান্তরা ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, মেনিনজাইটিস ও এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত। রোগীদের বেশিরভাগই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ৫ মাস থেকে ২ বছরের শিশু।
শীতে কী কী কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগ বেড়ে যাচ্ছে তার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবু সাইদ চৌধুরী বলেন, শীতের কারণে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যাওয়ায় বাতাসে ধুলোবালি বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে এলার্জিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, ভারি কাপড় পরা নিশ্চিত করা, ধুলোবালি থেকে শিশুদের নিরাপদে রাখা, শিশুদের মায়ের বুকের দুধ নিশ্চিত করা, শিশুদের নির্ধারিত টিকাগুলো দেওয়া ও নরমাল ড্রপ দিয়ে নিয়মিত নাক পরিষ্কার রাখা। এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখলেই শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে নিরাপদ রাখা যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শীতের তীব্র প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এছাড়া শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে নিরাপদ রাখতে বাড়তি খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।