ট্যুরিস্ট ভিসা সহজলভ্য করতে হবে

বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে মূলত দুটো সেক্টর থেকে। এর একটি হলো তৈরি পোশাক রপ্তানি অন্যটি রেমিট্যান্স অর্থাৎ প্রবাসীদের পাঠানো ডলার। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা অনেক আগে থেকে বলে আসছেন এই দুটি খাত টেকসই নয়। যেকোনো সময় এ খাতে আয় কমে যেতে পারে। কাজেই আমাদের উচিত বিকল্প পন্থা বা উপায় খুঁজে বের করা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারতো পর্যটন খাত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি শূন্যের কোঠায়।
তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজার হতে পারতো পর্যটনের জন্য আদর্শ স্থান। কিন্তু আমরা তার কিয়দাংশও ব্যবহার করতে পারিনি। তিন পার্বত্য জেলায় রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ আর কক্সবাজারে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। এসব স্থান যদি সঠিকভাবে গড়ে তোলা যেত, যদি পর্যটকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা যেত তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার বড় যোগানদার হতো পর্যটনশিল্প।
এসব তো হয়-ইনি উপরন্তু অভিযোগ আছে দূতাবাসগুলো পর্যটকদের ভিসা দিতে গড়িমসি করে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়া এখানে অনেকটা ‘সোনার হরিণ’ পাওয়ার মতো। কখনও কখনও সোনার হরিণের চেয়েও দুষ্প্রাপ্য। অনেক দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য ছুটেও লাভ হয় না, প্রত্যাখ্যাত হতে হয় বিদেশি পর্যটকদের। বাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে সরকারি উদ্যোগে বড় কোনও ব্রান্ডিং বা প্রচারণা নেই। বেসরকারি উদ্যোগে বিদেশি পর্যটকদের আনার চেষ্টাও হোঁচট খাচ্ছে ভিসা না দেওয়ার কারণে। বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়াতে সহজে ই-ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালুর দাবি পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেসরকারি উদ্যোগে দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের বাংলাদেশ আসার জন্য উৎসাহী করছেন তারা। তবে শুরুতেই হোঁচট খেতে হয় বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ট্যুরিস্ট ভিসা না দেওয়ার কারণে। কখনো কখনো একই গ্রুপের ১০ জনকে ভিসা দিল তো ২ জনকে দেয় না, ফলে পুরো গ্রুপই বাংলাদেশে ট্যুর প্ল্যান বাতিল করে। অনেক সময় ট্যুর অপারেটররা বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের সহায়তা চাইলেও সুফল মেলে না।
রোষানলে পড়ার আতঙ্কে অনেক ট্যুর অপারেটর ভিসা জটিলতা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না। পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভিসা না দেওয়ার কারণে বিদেশি পর্যটকরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। কখনো ভিসা পেতে ধরতে হয় দালাল, ব্যয় করতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। এসব কারণে বাংলাদেশ ভ্রমণে বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহ কম।
আরও অভিযোগ হলো, যেসব দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাবেন, তারা দূতাবাসে যোগাযোগ করলে বলা হয় অন-অ্যারাইভাল ভিসা তিনি পাবেন না। ঢাকায় বিমানবন্দরেও সহজে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হয় না।
এ ধরনের অভিযোগগুলো গুরুতর ও বেশ পুরোনো। এখনো যেহেতু সমস্যাগুলো বিদ্যমান তখন বুঝে নিতে হয় কর্তৃপক্ষ বড় উদাসীন। কর্তব্যকাজে উদাসীনতা একটি অপরাধ। এমন অপরাধের কারণে দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কাজেই এই অপরাধের নিশ্চয়ই সাজা হওয়া উচিত।