বাংলাদেশের বহুল আলোচিত স্থানের নাম সেন্ট মার্টিন। বিশেষ করে ভূরাজনীতির প্রসঙ্গ এলে সেন্ট মার্টিনের কথা আসে। আর ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণের কথা সবারই তো জানা। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। নানাভাবে আলোচিত ছোট্ট এই দ্বীপটি দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই দ্বীপ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে ভ্রমণকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অন্যতম।
এটি ভালো উদ্যোগ তা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। কিন্তু পত্রিকার খবরে জানা গেল সেখানকার একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকই নেই অনেক বছর ধরে। পত্রিকায় লেখা হয়েছে, জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক-সংকটে ধুঁকছে এক যুগের বেশি সময় ধরে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের পদ রয়েছে ছয়টি। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ চারটি পদ প্রায় ১৪ বছর ধরে শূন্য পড়ে রয়েছে। বর্তমানে মোহাম্মদ তাহের ও মুহাম্মদ নুরুল হুদা নামের দুজন শিক্ষক কর্মরত। প্রধান শিক্ষক না থাকায় মোহাম্মদ তাহের সেই দায়িত্ব পালন করেন। তাঁকে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। শিক্ষক নুরুল হুদাকে দিয়েই মূলত চলে পাঠদান। জানা গেছে, শিক্ষক-সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যালয়টিতে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। পাঁচ-ছয় বছর আগেও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল পাঁচ শতাধিক। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১৮ জন।
ইউপি সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, শিক্ষক-সংকটের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ঠিকমতো পাঠদান সম্ভব হয় না। এতে অভিভাবকেরাও বিদ্যালয়টিতে শিশুদের পাঠাতে চান না। ফলে অনেক শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, দ্বীপে যেসব বাসিন্দার সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা কক্সবাজার বা টেকনাফ সদরে রেখে সন্তানদের পড়ান। কিন্তু দরিদ্র বাসিন্দাদের পক্ষে সেটি সম্ভব হয় না। দ্বীপের একমাত্র সরকারি বিদ্যালয়টির শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দিলে এই সংকট কাটানো যাবে।
জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে ৩৭ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি ছাড়া সেন্ট মার্টিনে আর কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। তবে কয়েকটি নুরানি মাদ্রাসা রয়েছে।
অন্তত দু দশক ধরে দেশের মূলধারার শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। বিশেষ করে কভিড মহামারীর পরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সে অবস্থায় ৭৫ বছরের একটি বিদ্যালয় ধুঁকে ধুঁকে চলবে তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা বারবার বলেছি শিক্ষাখাতে ব্যয়, ব্যয় নয় এটি বিনিয়োগ। আজকের বিনিয়োগ একদিন সুদাসলে অনেক বৃদ্ধি পাবে। জাতি শিক্ষিত না হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নও আশানুরূপ ঘটবে না। সেন্ট মার্টিন নিয়ে অন্যকিছু ভাববার আগে সেখানকার শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করুন। এটা মৌলিক অধিকার।
এ মুহূর্তের সংবাদ