সময়ের কাজ সময়ে না করলে যে বিপদ ঘনিয়ে আসে তা এই করোনাকালে বুঝা গেছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর যে সময়ের অতি পেছনে চলেছে তার প্রমাণ বিভিন্নভাবে পাওয়া যাচ্ছে। তাদের সর্বশেষ অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতার নজির টিকা পেতে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হওয়া। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ থেকে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে, এর কার্যক্রমে জনগণ সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছে কিন্তু টিকার কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চলবে কিনা সে ব্যাপারে সংশয়ও তৈরি হয়েছে। এর প্রধান কারণ টিকার মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি। গণমাধ্যমে টিকার ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। টিকার ব্যাপারে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা আমাদের সমস্যায় ফেলেছে যদিও ভারতের সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি সেই দেশটিকেও বিপর্যয়ে ফেলেছে। সংস্থাটির প্রতিশ্রুত টিকার পরিমাণ ৩ কোটি ডোজ অথচ তারা আমাদের টিকা দিয়েছে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ। ভারত উপহার হিসেবে একই কোম্পানির ৩৩ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। এখন যে টিকার মজুদ আছে, যদি দ্রুত টিকা সংগ্রহ করা না যায় তবে দ্বিতীয় ডোজের টিকায় কিছু ঘাটতি থেকে যেতে পারে। সরকার গতকাল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ২০ লাখ ডোজ, কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের ১ লাখ ডোজ টিকা মে মাসের মধ্যেই পাবার আশা করছে। চীন উপহার হিসেবে এই সময় ৫ লাখ ডোজ টিকা দেবে বলেছে। রাশিয়ার পর চীনের টিকা পেতে ঢাকাস্থ দূতাবাসে আগ্রহপত্র পাঠিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ১০ কোটি টিকা কিনতে অর্থায়নের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
দেশের ৮০ শতাংশ লোককে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য আছে, সে হিসেবে ১৩ কোটি লোকের জন্য ২৬ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, যত তাড়াতাড়ি অধিক সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে তত করোনার বিপদ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। জাতীয় পরামর্শক কমিটি গত সেপ্টেম্বরেই বিকল্প নানা উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এত দেরিতে সাড়া দিল কেন? তদুপরি টিকা সংগ্রহে মতামত দিতে কোর কমিটিও মাত্রও কয়েকদিন আগে করা হয়েছে। অথচ এটি অনেক আগেই করা প্রয়োজন ছিল।
স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নানা প্রতিষ্ঠানের মাঝে সমন্বয়হীনতা প্রকট। এ কারণে করোনার ওষুধ ও সরঞ্জাম সামগ্রী দীর্ঘদিন শাহজালাল বিমানবন্দর ও কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে পড়েছিলো। হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর ব্যাপারে দীর্ঘসূত্রতা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও অনেক জেলা হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের নানা প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালকদের বদলিও তাদের অদক্ষতার কারণে অনেক প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। জাতীয় এ দুর্যোগে এ ধরণের অব্যবস্থাপনা প্রত্যাশিত নয়। আমরা চাই করোনার বর্তমান সংক্রমণ তীব্র হওয়ায় যত দ্রুত সম্ভব দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের কাজটি জোরদার করবে। দেশে টিকা উৎপাদনে সক্ষমতার বিষয় নিয়েও সরকারের ভাবা উচিত। অতীতে আমাদের দেশে নানা রোগের টিকা উৎপাদন করা হয়েছে।
মতামত সম্পাদকীয়