নিজস্ব প্রতিবেদক »
সকাল থেকে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে সুশৃঙ্খল লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল নগরীর তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীরা। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন বা কমিশনার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট কিছুই নেই তাদের। যার ফলে কোভিড টিকা দান কার্যক্রমের ৯ মাস পরেও তারা ছিলেন টিকাহীন। সিভিল সার্জনের উদ্যোগে টিকার আওতাভুক্ত হয়েছেন তারা।
গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় নগরীর আন্দরকিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হল রুমে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা দিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহারিয়ার কবীর।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিশেষ এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নগরীর তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫শ’ জনকে টিকার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাস্থ্যবিভাগ। তাদের উপস্থিতি অনুযায়ী ৩শ’ জন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী পেয়েছে টিকা।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হল রুমের দুই বুথে মাত্র এক ঘণ্টায় সুশৃঙ্খলভাবে টিকাদান কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এদিকে কোভিড টিকা নিতে পেরে উচ্ছ্বাসিত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীরা।
এসময় করোনার টিকা পেয়ে সিনথিয়া বলেন, ‘টিকা নেওয়ার জন্য এসে ভয় পেয়েছিলাম। টিকা নিয়ে ভয় কেটে গেছে। যারা এমন ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের বৃহৎ সংগঠন নবজাগরণ হিজড়া শ্রমজীবী সমবায় সমিতির পরিচালক ফাল্গুনী হিজড়া সুপ্রভাতকে বলেন, ‘প্রথমত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে টিকা গ্রহণের অধিকার পেয়ে খুবই আনন্দিত। দুদিন আগে সিভিল সার্জন স্যারকে টিকার কথা বলায় তিনি কথা দিয়েছিলেন আমাদের জনগোষ্ঠীকে টিকা দিবেন। মাত্র দুই দিনের মাথায় তা পাবো ভাবিনি। মূলত আমাদের বেশির ভাগেরই ভোটার কার্ড নেই তাই রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিতে পারিনি।’
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডা. হাসান শাহারিয়ার কবীর বলেন, ‘দেশের মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী হওয়াতে এবং টিকা গ্রহণ করায় করোনা শনাক্তের হার ও মৃত্যু হার কমেছে। তাছাড়া আজকে (সোমবার) চট্টগ্রাম জেলা করোনা শনাক্তহীন ও মৃত্যুহীন দিন কেটেছে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সভাপতিত্বে টিকা দান কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আসিফ খান, মেডিক্যাল অফিসার ডা. ওয়াজেদ অভি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. জাহেদুল ইসলাম, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া।
এদিকে, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর টিকাদান কার্যক্রম শেষে এবার নগরে বসবাসরত ‘বেদে’ সম্প্রদায়কে টিকার আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্যবিভাগ।
বৃহস্পতিবার তাদের টিকা দেওয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে। এতে ১৫০ জন পাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা। গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বেদে সম্প্রদায়কে ভ্যাকসিন কার্যক্রমে সমন্বয় করবেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান, এমও (ডিসি) ডা. মো. নুরুল হায়দার, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া। এতে টিকা প্রদান করবেন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক শক্তি বড়ুয়া, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক আকতার বানু এবং স্বাস্থ্য পরিদর্শক (অব.) প্রদীপ কুমার দেব।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী জানান, ‘বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে টিকা দান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে প্রাথমিকভাবে নগরে বসবাসরত ১৫০ জনকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা দেয়া হবে।’
তিনি আরো জানান, ‘বৃহস্পতিবার একদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সংখ্যায় বাড়লে তারাও ভ্যাকসিনের আওতায় আসবে বলে জানান তিনি।’