সুপ্রভাত ডেস্ক »
ফ্রান্সের এক সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্তরা এমনকি করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টের মোকাবিলা করতে পারেন৷ এদিকে ফাইজার কোম্পানি টিকার তৃতীয় ডোজের অনুমোদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷
করোনা ভাইরাসের অত্যন্ত ছোঁয়াচে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট কি করোনা টিকাকে ফাঁকি দিয়ে শরীরে জাঁকিয়ে বসতে পারে? গোটা বিশ্বজুড়ে টিকাদান কর্মসূচির মধ্যে এই প্রশ্নটি বার বার উঠে আসছে৷ বিশেষ করে সম্প্রতি ইসরায়েলের একটি গবেষণাকে ঘিরে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে৷ ফাইজার-বায়োনটেকের মতো কার্যকর করোনা টিকার দুটি ডোজ পাওয়া সত্ত্বেও সে দেশে কিছু মানুষ ডেল্টায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে সেই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে৷ গবেষণার ফল অনুযায়ী ডেল্টার মোকাবিলায় সেই টিকার কার্যকারিতা প্রায় ৬৪ শতাংশ৷ তবে প্রায় সব গবেষণায় এটা মেনে নেওয়া হয়েছে, যে সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্তরা করোনায় আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন প্রায় হয় না বললেই চলে৷
এবার ফ্রান্সের এক নতুন গবেষণা অনুযায়ী টিকাপ্রাপ্তদের মুষড়ে পড়ার কারণ নেই৷ করোনা টিকা ডেল্টা সংস্করণেরও জোরালো মোকাবিলা করতে পারে৷ সে দেশের পাস্তুর ইনস্টিটিউট ‘নেচার’ পত্রিকায় গবেষণার ফল প্রকাশ করে জানিয়েছে, যে এ ক্ষেত্রে টিকার সব ডোজ নেওয়া জরুরি৷ ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যে ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনিকা কোম্পানির টিকার একটি ডোজ পেলে তেমন প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়৷ তবে দ্বিতীয় ডোজের পর শরীরে ইমিউনিটি কয়েক গুণ বেড়ে যায়৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে করোনা টিকাদান কর্মসূচি গতি পেলেও ডেল্টা সংস্করণের প্রকোপ বেড়েই চলেছে৷ পর্তুগালের সরকার সংক্রমণের উচ্চ হার মোকাবিলা করতে ইইউ ডিজিটাল কোভিড সার্টিফিকেট আরও ব্যাপক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ জার্মানির মতো দেশে সংক্রমণের হার প্রায় দুই মাস ধরে লাগাতার কমে এলেও গত দুই দিন ধরে সামান্য হলেও সেই হার আবার বাড়ছে৷ সেই সঙ্গে আক্রান্তদের মধ্যে ডেল্টা সংস্করণের অনুপাতও বেড়ে চলেছে৷
এদিকে ডেল্টা ও ভবিষ্যতে অন্যান্য সম্ভাব্য আরও ছোঁয়াচে ও মারাত্মক সংস্করণের মোকাবিলা করতে তৃতীয় ডোজ প্রয়োগ করতে চাইছে ফাইজার কোম্পানি৷ আগামী মাসেই মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে সেই লক্ষ্যে আবেদন জমা দেবার পরিকল্পনা রয়েছে৷ কোম্পানির প্রধান বিজ্ঞানী মিকায়েল ডলস্টেন এই খবর জানিয়েছেন৷ তার মতে, দ্বিতীয় ডোজ পাবার ছয় মাস পর প্রতিরোধ শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকির ভিত্তিতে তৃতীয় ‘বুস্টার’ ডোজের প্রয়োজন হতে পারে৷ ইসরায়েলের গবেষণায় এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ বিশেষ করে ডেল্টার মতো জোরালো ভেরিয়েন্টের মোকাবিলার জন্য এমন পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে৷ ইউরোপের কিছু দেশ ইতোমধ্যেই ফাইজার-বায়োনটেকের টিকার তৃতীয় ডোজের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে৷ ফলে অ্যামেরিকার আগেই সম্ভবত ইউরোপে এই পদক্ষেপ অনুমোদন পেতে পারে বলে ডলস্টেন মনে করেন৷
সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্তৃপক্ষ এফডিএ এবং সিডিসি অবশ্য এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, যে টিকার সব ডোজ পাওয়া মানুষদের এই মুহূর্তে কোনো বুস্টার ডোজের প্রয়োজন নেই৷ তবে প্রয়োজন দেখা দিলে তৃতীয় ডোজের জন্য দুই দফতরই প্রস্তুত বলে জানিয়েছে৷ বিজ্ঞানী মহলেও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ রয়েছে৷ সব মানুষের জন্য তৃতীয় ডোজের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন হবে না বলে অনেকে মনে করছেন৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে