১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সড়ক টানেলটি গত ২৮ অক্টোবর, শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
টানেল খোলার পর গত কয়েক দিনে কার রেসিং, দ্রুত গতিতে বাস চালিয়ে প্রাইভেট কারকে পিছন থেকে ধাক্কা দেওয়া, টানেলের ভেতর সেলফি তোলা এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টোল প্লাজার ব্যারিয়ারে ধাক্কা দেওয়ার মত কয়েকটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে।
২৯ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর থেকেই নিয়মভঙ্গের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে সেখানে। প্রথমে একটি প্রাডো গাড়ি অতি দ্রুত গতিতে টানেলের টোল প্লাজায় ধাক্কা দিলে রেলিং কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর মূল টানেলের বাইরের সড়কে রেসিং কারকে স্টান্ট (গেম বিশেষ যেখানে গাড়ি শূন্যে উঠে পড়ে) করতে এবং টানেলের ভেতরে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ভিডিও ভাইরাল হয়। ১১টার দিকে গাড়িগুলোর চালকরা টানেলের আনোয়ারা অংশে অ্যাপ্রোচ সড়কে (চায়না হারবাল ক্রসিং) রেস এবং ওভারটেকিং করে বিপজ্জনকভাবে চালানোর মাধ্যমে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
এরপর রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে গাড়িগুলোর চালক টোল পরিশোধ করে টানেলে প্রবেশ করে। সেখানেও গাড়িগুলো রেসিং, ওভারটেকিং করে বিপজ্জনকভাবে চালানোর মাধ্যমে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে মোট ১০টি প্রাইভেট করা দেখা যায়। কর্তৃপক্ষ টানেলের ভেতরে থাকা সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে গাড়িগুলো শনাক্ত করে। তবে দুই/তিনটি গাড়ির নম্বর শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা গণমাধ্যমে বলেন, ‘টানেল কর্তৃপক্ষ তাদের সিসি ক্যামেরায় শনাক্ত হওয়া সাতটি গাড়ির নম্বর মামলায় দিয়েছে। বিআরটিএ থেকে সেগুলোর মালিকানা যাচাই করা হবে।’
একইদিন বিকেলে টানেলের ভেতরে গাড়ি থামিয়ে সেলফি তুলতে দেখা গেছে। যদিও টানেলে গাড়ি থামানো এবং গাড়ি থেকে নামা সম্পূর্ণ নিষেধ। এছাড়া, গত মঙ্গলবার বিকালে একটি প্রাইভেট কারকে একটি মিনি বাস পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে টানেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। টানেল কর্তৃপক্ষ প্রাইভেট কার থেকে জরিমানা আদায় করেছে। এছাড়া টানেলের ভেতরে স্পিড ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টানেল কর্তৃপক্ষ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান পরামর্শক্রমে মোটরযানের গতিসীমা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করেন। এ বিষয়ে টানেলের প্রবেশ মুখ, ভেতরসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান স্থানে গতিসীমা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরেও কিছু মানুষের মধ্যে এমন উন্মাদনা দেখা গেছে। এতে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটেছিল। টানেলে সেদিন যা ঘটেছিল তাতে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। কাজেই টানেলের নিরাপত্তায় যদি কর্তৃপক্ষ কঠোর না হয় তাহলে বিপদ বাড়তে পারে। তাই টানেলের মধ্যেই গতি পরিমাপক স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে সঙ্গে অপরাধী যেই হোক তারা যেন ক্ষমতা ও অর্থের জোরে পার পেয়ে যেতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রথমে আইন প্রয়োগে শিথিলতা দেখালে পরে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। কাজেই এরমধ্যে যারা অপরাধ করেছে তাদের দ্রুত আইনের আউতায় এনে অন্যদের শিক্ষা দিতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ