টানেলের নিরাপত্তায় আরও পদক্ষেপ নিতে হবে

একদিনের ব্যবধানে দুটো দুর্ঘটনার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার সকালে টানেলের ভেতর একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের দেয়ালে ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে টানেলের কিছু সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে সড়কের বৈরাগ এলাকায় দ্রুতগতির মাইক্রোবাসের ধাক্কায় সিকিউরিটি পোস্ট ভেঙে দায়িত্বরত একজন নৌবাহিনীর সদস্যসহ সাতজন আহত হন। মাইক্রোবাসটি উল্টে যায়। অর্থাৎ এক দিনের মাথায় দুটো দুর্ঘটনা ঘটল টানেলের ভেতর ও প্রবেশমুখে। এ নিয়ে গত আড়াই মাসে টানেলের ভেতরে-বাইরে ঘটলো পাঁচটি দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে আনোয়ারা প্রান্ত থেকে পতেঙ্গা প্রান্তে যাচ্ছিল মুরগিবাহী একটি পিকআপ। টানেল অতিক্রম করার সময় চাকা ফেটে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি টানেলের টিউবে ধাক্কা দেয়। এতে নির্দেশনা বোর্ড ভেঙে যায় এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আগে, গত ১০ নভেম্বর টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে ওয়াই জংশন এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক ব্যক্তি নিহত হন। ৩ নভেম্বর টানেলের ভেতরে একটি প্রাইভেট কারকে পেছন থেকে একটি বাস ধাক্কা দিলে কারটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং চারজন আহত হন। উদ্বোধনের দুদিন পর ৩০ অক্টোবর আনোয়ারা প্রান্তে টোল প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় একটি প্রাডো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনায় পড়ে।
তারও আগে টানেলের অভ্যন্তরে রেসিংয়ে লিপ্ত হয়েছিল ধনাঢ্য পরিবারের কয়েকজন সন্তান তাদের দামি গাড়ি নিয়ে।
এ এক অদ্ভুত মানসিকতা আমাদের। দৃষ্টিনন্দন, সুন্দর, শৈল্পিক কোনোকিছুই যেন সহ্য হয় না আমাদের। উদ্বোধন হওয়ার দু সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের ঝিনুক ফোয়ারার পানিতে ভাসমান প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা আবর্জনার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের দুদিনের মধ্যে সেতুর নাট-বল্টু খুলে ফেলার ঘটনাও বেশ তোলপাড় তুলেছিল।
দীর্ঘদিন ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার ফলে দেশের সম্পদকে নিজের বলে না ভাবার একটি মানসিকতা আছে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও কি সে মানসিকতার পরিবর্তন হবে না? সাধারণ সড়কে চলাচল আর টানেল কিংবা সেতুতে চলাচল যে এক নয়, বরং এসব স্থানে অধিক সতর্কতার দরকার এ কথাটি কি আমরা কখনো অনুধাবন করব না?
তারপরও আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাব টানেলের নিরাপত্তার স্বার্থে যেন আরও বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। টানেলের ভেতর নির্দেশিত গতিসীমা অতিক্রমকারীদের যেন কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া না হয়।