আমন চাষাবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক
রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া :
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে উখিয়ার নিম্নাঞ্চল সমূহ প্লাবিত হয়েছে। নির্মাণাধীন কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকার ফলে পাহাড়ি জনপদে বসবাসরত লোকজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আমন চাষাবাদ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে কৃষককূল। পাহাড় ধসে অপমৃত্যু রোধে স্থানীয় প্রশাসন বা বনবিভাগ সতর্কতা মূলক উদ্যোগ গ্রহণ না করায় পরিবেশবাদি সচেতন মহলের মাঝে দেখা দিয়েছে ড়্গোভ। তাদের দাবি এদেশে রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে পাহাড়ে বসবাসের সংখ্যা বেড়েছে আশংকাজনকভাবে। বর্তমান পরিবেশগতভাবে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড় ধসের বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।
সরেজমিন পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী, আনজুমানপাড়া, তানজিমারখোলা, ধামনখালী এলাকা ঘুরে স্থানীয় গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে এ ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম পস্নাবিত ও নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে পড়েছে। যে কারণে আমন বীজতল নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ কৃষক বীজতল নষ্টের কারণে আমন চাষাবাদ করতে পারেনি। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক মাছের ঘের পস্নাবিত হয়ে মাছ চাষিরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পালংখালী ইউনিয়নের চিংড়ি চাষি ছব্বির আহমদ, শামশুল আলম ও শফি আলম সহ একাধিক লোকজন জানান, টানা বর্ষণের কারণে ও নাফনদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় হাজার একরেরও অধিক চিংড়ি ঘের পস্নাবিত হয়ে বিপুল সংখ্যক মাছ সাগরে ভেসে গেছে।
স্থানীয় কৃষক আলতাজ আহমদ জানান, গত কয়েকদিনের ভারীবর্ষণ ও সীমানেত্মর পাহাড়ি ঢলের পানিতে এলাকার ফসলি জমি ও চিংড়ি ঘের একাকার হয়ে পড়েছে। জমিতে বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমন চাষাবাদ নিয়ে কৃষকেরা চরম হতাশায় ভুগছে। কৃষকদের দাবি দু’য়েক দিনের মধ্যে আমান চাষাবাদের কাজ সম্পন্ন করা না গেলে পরবর্তীতে আমন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত চারা রোপন করা সম্ভব হচ্ছে না। থাইংখালী ইউপি সদস্য মোজাফ্ফর আহমদ সওদাগর জানান, বন্যায় পালংখালী এলাকার কৃষক ও মাছচাষি সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কারণে ক্ষতিগ্রস’ লোকজন এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি। ইতিমধ্যে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল সমূহ পস্নাবিত হওয়ায় ফের বন্যার আশংকা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে।
ভারী বর্ষণে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের সাদৃকাটা, রাজাপালং, থাইংখালী, ও বালুখালী কাস্টম্স এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। সড়কে ৩/৪টি গাড়ি আটকা পড়ে মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার যাত্রী পথচারী। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৮ হাজার একর জমিতে আমন চাষাবাদের লড়্গ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা আবু মাসুদ জানান, বৃষ্টিতে আমন বীজতলার ক্ষয়ক্ষতি হলেও প্রায় ৫০শতাংশ জমিতে চারা রোপনের কাজ শেষ হয়েছে। নিম্নাঞ্চল সমূহ পস্নাবিত হওয়ায় চারা রোপন ব্যাহত হলেও আমন উৎপাদনের উপর তেমন কোন প্রভাব পড়বে না বলে তিনি আশ্বসত্ম করেন।
কক্সবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, এখানে পাহাড় ধসের হতাহতের জন্য বনবিভাগকে দায়ভার বহন করতে হবে। কেননা তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে পাহাড় কাটা ও পাহাড়ের উপর বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারম্নজ্জামান জানান, ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল সমূহ পস্নাবিত হয়ে আমন চাষাবাদ ব্যাহত হলেও অন্যান্য সম্পদের উপর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। তবে পাহাড়ের উপর যে সমসত্ম লোকজন বসবাস করছে তাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বনবিভাগকে ইতিমধ্যে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে এবং সতর্কতামূলক বসবাসের জন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে। যাতে পরিবেশ সংকটাপন্ন অবস্থায় বসবাসরত পরিবারগুলো নিরাপদে সরে আসতে পারে।