নিজস্ব প্রতিবেদক »
কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ শুরু হতে না হতেই গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের সঙ্গে ২-১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে আর্জেন্টিনা। আর এ পরাজিত হওয়ার পর চট্টগ্রামের জার্সির বাজার হঠাৎ ঝিমিয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা জার্সি স্টক করে লোকসানে আশঙ্কা করছেন।
জানা গেছে, প্রিয় দলের খেলায় হতাশায় মুখ ভার হয়েছে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। প্রিয় দলের এমন হার কোনভাবে মেনে নিতে পারছে না আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। হঠাৎ অনাকাক্সিক্ষত এমন হারে থমকে গেছে জার্সির বাজার। জার্সি কিনতে এসেও অনেক সমর্থকরা নীরব হয়ে যাচ্ছেন।
নগরীর জার্সি ব্যবসায়ীদের দাবি আর্জেন্টিনা পরাজিত হওয়ার পর থেকে সারাদিন আর্জেন্টিনার জার্সির বাজার মন্দা গেছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে ব্রাজিলসহ অন্যান্য দলের জার্সির প্রতিও ক্রেতাদের অনীহা। অস্বাভাবিক মন্দায় দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান জার্সি ব্যবসায়ীরা।
গতকাল নগরীর স্টেডিয়াম, আফমি প্লাজাও সানমার শপিং মলগুলোর বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। আফমি প্লাজার গেমিং জেনারেশনের ম্যানেজার মো. আকাশ বলেন, সারা সপ্তাহ জুড়ে জার্সি বিক্রি হলেও বুধবার সারাদিন একটি জার্সিও বিক্রি হয়নি। এবার আশা করছিলাম ভালো জার্সি বিক্রি হবে।
কাজীর দেউরি এলাকার ক্রিকেট শপের মালিক ফারহান ইসলাম সুমন বলেন, আর্জেন্টিনা পরাজিত হওয়ার পর জার্সির বাজারে প্রভাব পড়ছে। ক্রেতাদের উৎসাহে ভাটা পড়ছে। মাঝেমধ্যে দুয়েকজন ক্রেতা দেখা গেলেও তবে তাদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আগে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্যে জার্সি নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। মঙ্গলবারের পর থেকে তেমন প্রতিযোগিতা দেখছি না। এই বছর ৫ লাখ টাকার জার্সি স্টক করেছি এখনো ৪ লাখ টাকার জার্সি রয়ে গেছে। এমন হলে বড় ধরনের লোকসানে থাকবো।
স্পোর্টস আনলিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে জার্সির বাজার একচেটিয়া হয়ে গেছে। ব্রাজিলের জার্সির প্রতি ক্রেতাদের উপস্থিতি থাকলেও আর্জেন্টিনার জার্সি সারাদিন বিক্রি হয়নি। মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার জার্সির ক্রেতা কমেছে।’
আইমান স্পোর্টসের মো. সাকিব বলেন, তিন ভাগের এক ভাগ বিক্রি হয়েছে। কোন ক্রেতা নেই। তবে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ভালো অবস্থান ফিরে আসলে হয়তো জার্সির বাজার আবার চাঙা হবে বলে আশাবাদী এই ব্যবসায়ী।
গ্লোবাল স্পোর্টসের ইনচার্জ মো. রুস্তম আলী বলেন, আগে বিক্রি হলেও আর্জেন্টিনার হারের পর থেকে এখন নেমে আসছে। তবে জার্মানির জার্সির ক্রেতা একটু বাড়ছে।
যদি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল হেরে যায় লোকসানের সম্ভাবনা কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই দু’দল পরাজিত হলে বড় ধরনের লোকসানে পড়বো। প্রায় ৫ হাজারের উপরে জার্সি মজুদ করেছি। দু’হাজারের মত বিক্রি হয়েছে এমন অবস্থায় যদি দু’দল হেরে যায় বড় ধরনের লোকসানে পড়বো। তখন তো আর কেউ কিনবে না। আগে যে জার্সি ৮শ’ টাকায় বিক্রি করছি তা কেনা দামেই বিক্রি করে দিচ্ছি। লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছি।
জার্সি কিনতে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কনিকা চৌধুরী বলেন, ‘ব্রাজিল সমর্থক। গতকাল আর্জেন্টিনার দুঃখের সংবাদ শুনে নিজের দলের প্রতি ভয় হচ্ছে। আপাতত জার্সি দেখলাম। এখন কিনবো না। কোয়ার্টার ফাইনালের পর জার্সি কিনবো। পরতে না পারলে জার্সি কিনে লাভ নেই।’
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শাভা নূর পারভেজ বলেন, আর্জেন্টিনার এমন হার দেখে, নিজের ভালো লাগছে না। কারণ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা না থাকলে মজা হারিয়ে যাবে। মনেপ্রাণে চাই ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হোক।
আর্জেন্টিনা সমর্থক শিক্ষার্থী মিথিলা শর্মা বলেন, এবার জার্সি দুটি কিনেছি। দীর্ঘদিন আর্জেন্টিনা সমর্থন করেছি। আর্জেন্টিনার এমন খেলা দেখে এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। তবে আর্জেন্টিনা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদী এই সমর্থক।
নতুন কোন দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর্জেন্টিনা হেরে গেলে স্পেন, বেলজিয়াম বা জার্মান দল সমর্থন করবো। বর্তমান ফুটবলে ইউরোপের স্বর্ণযুগ।
অন্যদিকে খুলশী থেকে জার্মানির জার্সি কিনতে আসা ফয়সাল কবীর বাপ্পী বলেন, জার্মানি প্রিয় দল।১৫ বছর ধরে জার্মানির সমর্থক।
জার্মানিকে সমর্থন করার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, জার্মানির এক ঝাঁক তরুণরা খেলছে। কেভিন ট্যাপ, অ্যান্তিনোও রুডিগার, জানাথন থাহ আছেন তাছাড়া থমাস মুলার, এারি গোটসে, ম্যানুয়্যাল নয়ারের মত শক্তিশালী খেলোয়াড় তো আছেনই। তাহলে ভাবা যায় জার্মানির এই তরুণরা। নতুন প্রজন্ম তাদের মত সাফল্য এনে দিতে নিশ্চয়ই প্রস্তুত থাকবেন বলে আশাবাদী এই জার্মানি সমর্থক।