নিজস্ব প্রতিবেদক :
জ্ঞান, বিদ্যা ও ললিতকলার দেবী শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা আজ। এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয় এবং শ্রী পঞ্চমীর দিন সকালে সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা হয়। তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দেবী সরস্বতীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস সম্পন্ন হয়েছে।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে সোমবার দিবাগত রাত ৩টা ৩৯ মিনিটের পর পঞ্চমী আরম্ভ আর পরের দিন শেষ রাত্রি ৫টা ২৮ মিনিট এর পরে পঞ্চমী তিথি শেষ হবে। এরমধ্যে পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। পূজা শেষে ভক্তদের দেওয়া হবে অঞ্জলি, বিতরণ করা হবে প্রসাদ।
স্বরসতী মূলত বৈদিক দেবী। বেদে কিন্তু সরস্বতী প্রধান নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সরস শব্দের অর্থ জল। সরস্বতী শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থে সরস(জল)+মতুন+ঙীন(স্ত্রী)। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হল জলবতী অর্থাৎ নদী।
দেবী সরস্বতী জ্ঞানদায়িনী, সর্বশুক্লা, তিনি বাগদেবী ও নিষ্কলা, নিত্যশুদ্ধা, তিনি প্রশহমশ বুদ্ধিদায়িনী ও মোক্ষদাত্রী। সরস্বতী জ্ঞান বিদ্যা ও ললিতকলার অধিষ্ঠাত্রী হিসেবে পূজিত হয়ে আসছেন আদিকাল থেকে।
সকল ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে সরস্বতী পূজা এক অন্যরকম আবেদন সৃষ্টি করে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর মঠ, মন্দির, ও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলি গলিসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে আয়োজন করা হয় সরস্বতী পূজার।
আজকের দিনটি অত্যন্ত শুভ। তাই এই দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথাও প্রচলিত রয়েছে। লোকাচার অনুসারে ছাত্র-ছাত্রীরা সরস্বতী পূজার আগে কুল খেতে পারে না। পূজার দিন কিছু লেখা নিষিদ্ধ। পূজার পরের দিনটি শীতলষষ্ঠী নামে পরিচিত। পূজা উপলক্ষে আজ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
আজকের এই শিশিরস্নাত ঊষালগ্নে দেবী তাঁর অগণিত ভক্তের মাঝে শুভাগমন করবেন। দেবীকে বরণ করার জন্য প্রস্তুত নগরের পূজামণ্ডপগুলো। সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। পূজামণ্ডপের বিভিন্ন গলির সম্মুখভাগ থেকে শেষভাগ পর্যন্ত নানা রঙের শোভা পাচ্ছে। এছাড়া মণ্ডপগুলোর প্রবেশমুখে তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় তোরণ। পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে লাগানো হয়েছে ডিজিটাল ব্যানার। আজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর পূজামণ্ডপগুলোতে পূজার আনুষ্ঠানিকতাসহ নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে সাড়ম্বরে উদযাপিত হবে সরস্বতী পূজা। পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে পূজার আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি রাখা হয়েছে।
জ্ঞান ও বিদ্যার প্রতীক হিসেবে সরস্বতী দেবীর বর্ণনা রয়েছে পুরাণে, বেদে, আরণ্যকে, সংস্কৃত সাহিত্যে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অন্যান্য মহাকবিরা সরস্বতী দেবীর বন্দনা করেছেন জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্পকলা, ললিতকলা, সঙ্গীত, নন্দনতত্ত্ব তথা সকল বিদ্যার প্রতীকরূপে। তাই তিনি শ্রুতি ও শাস্ত্রের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, কবিকূলের আরাধ্য দেবী।
সরস্বতী দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তিতে নেই কোন মারণাস্ত্র, হিংস্রতার লক্ষণ ও কোনো পশুশক্তির প্রতীক। রয়েছে শ্বেত-শুভ্র বসন, জ্ঞানে মসি ও পুহমশক। হাতে শান্তির ললিতবীণার বীণাযন্ত্র, আছে চির প্রবহমান ফল্গুধারা নদী, রয়েছে শ্বেত হংসবাহন।
এ মুহূর্তের সংবাদ