মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই বয়োজ্যেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট আর ইন্দোÑকৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসী কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। তাদের শপথের মধ্যদিয়ে ৪ বছরের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ আমেরিকার রাজনীতির একটি পর্বের অবসান ঘটলো। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোটা ক্যাপিটাল হিল নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ছিল। অবশ্য এই ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির জন্য দায়ী বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্রবাদী রাজনীতির প্রচারণা। যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের ইতিহাসে কেবল ট্রাম্পই নবÑনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলেন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘আমেরিকার আত্মা’ পুনরুদ্ধারের কথা বলে আসছেন, সেই সাথে সকল আমেরিকানদের ঐক্যবদ্ধ করার কথাও বলেছেন। শপথ নেওয়ার পর জো বাইডেন বলেন, এই দিনটি গণতন্ত্রের, এই দিনটি আমেরিকার। এই দিনটি ইতিহাস ও আশার দিন। বিভিন্ন সময়ে আমেরিকাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তার দেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আজকে আমরা গণতন্ত্রের বিয়ে উদযাপন করছি, বিশ্লেষকরা বলছেন, তাঁর প্রথম কাজ হবে আমেরিকাবাসীকে করোনার ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। করোনা মহামারি এ পর্যন্ত ৪ লাখ আমেরিকানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিশ্বনেতৃবৃন্দ তাঁর কাছে পাঠানো অভিনন্দন বার্তায় করোনা, জলবায়ু জনিত বিপদ নিয়ে একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
জো বাইডেন জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে যাওয়া, অভিবাসীদের প্রতি নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি, উগ্র, বর্ণবাদ পরিহারে কাজ করার কথা বলেছেন। তবে ট্রাম্প আমেরিকানদের যেভাবে বর্ণবাদ ও অভিবাসী ইস্যুতে বিভক্ত করে ফেলেছেন তাতে বাইডেনের কাজ কঠিনই হবে। সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটদের সমান শক্তি রয়েছে রিপাবলিকানদেরও। সিনেটে এখন বিদায়ী প্রেসিডেন্টের অভিশংসন নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার কথা।
জো বাইডেনের সামনে অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র এই দুই ক্ষেত্রে সতর্কভাবে অগ্রসর হতে হবে। দেশটির সামাজিক ঐক্যে ফাটল ধরেছে, যা আমেরিকার গণতন্ত্রকে বিপন্ন করেছে। করোনার পর দেশের অর্থনীতি খারাপ হয়েছে, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বেড়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধÑসংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় অর্থনীতির দশা আরো করুণ হয়েছে। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনতে বাইডেনকে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। যুদ্ধবাজ কূটনীতি পরিহার করতে হবে। চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর বিশ্বের ভারসাম্যমূলক অবস্থা নির্ভর করবে। মধ্যপ্রাচ্যের নীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে মুসলিম বিশ্বের আস্থা অর্জন করতে হবে। বিশেষ করে ফিলিস্তিন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বাইডেন প্রশাসনকে ট্রাম্পের নীতির পুনঃমূল্যায়ন ও পুনঃ নবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ চায় বাইডেন প্রশাসন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে এবং এর একটি যৌক্তিক ও ন্যায্য সমাধানে পৌঁছুতে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে।
অভিবাসীরা আমেরিকার অর্থনীতিই সমৃদ্ধ করছেনা বরং আমেরিকান গণতন্ত্র ও সমাজে বৈচিত্র্যপূর্ণ সামাজিক সাংস্কৃতিক অবদান রাখছে, তাই তাদের মানবাধিকার ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। মার্কিন প্রশাসনকে ‘সভ্যতার সংঘর্ষ তত্ত্ব’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃসংস্কৃতি সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসন করে একটি শান্তিপূর্ণ ও মানবিক বিশ্বসমাজ গড়ে তুলতে বাইডেন প্রশাসন ও আমেরিকান নাগরিক সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে আমরা বিশ্বাস রাখি।
জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে আমাদের অভিনন্দন।
মতামত সম্পাদকীয়