জুলাই-অক্টোবর: এডিপিতে অর্থ ব্যয় কমেছে ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি

সুপ্রভাত ডেস্ক  »

চলতি ২০২৪—২৫ অর্থবছরের চার মাসেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ ব্যয়ে গতি আসেনি। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই—অক্টোবর) উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থ খরচ হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। যা মোট এডিপি বরাদ্দের ৪.৭৫ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নের এই হার প্রায় ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৩১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা,যা ওই অর্থবছরে মোট এডিপি বরাদ্দের ১১.৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ, গত অর্থবছরের চেয়ে ৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা কম ব্যয় হয়েছে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে। আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০১০—১১ অর্থবছর পযন্ত তথ্য পাওয়া যায়। দেখা গেছে, পূর্বের বছরগুলোতে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হারে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। রোববার (২৪ নভেম্বর) আইএমইডি এডিপি বাস্তবায়নের হালানাগদ তথ্য প্রকাশ করে। চলতি অর্থবছরে সরকারের এডিপি বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। খবর টিবিএস।

আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই— অক্টোবর মাসে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা, যা সরকারি তহবিলের বরাদ্দের ৭.১৫ শতাংশ। এর আগে কোনো অর্থবছরে জুলাই—অক্টোবর মাসে সরকারি তহবিলেরও এত কম অর্থ ব্যয় হয়নি। গত অর্থবছরের একই সময়ের টাকা অংকে ব্যয় হয়েছিল ১৮ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা, যা ওই অর্থবছরের এডিপিতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দের ৭.৪২ শতাংশ। অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান চলতি অর্থবছরে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেখানে জুলাই—অক্টোবর মাসে ব্যয় হয়েছে ৮.২১ শতাংশ বা ৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বৈদেশিক তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছিল ১১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা বা ৭.৯৮ শতাংশ। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘নতুন সরকার সব প্রকল্প পর্যালোচনা করছে। যাচাই—বাছাইয়ের পর অনেক অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে সরকার। এ কারণে এই মুহূর্তে অনেক প্রকল্পে অর্থছাড়ও কম হচ্ছে। এর প্রভাবে এডিপি বাস্তবায়নেও ধীর গতি দেখা দিয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ প্রবাহ বাড়বে।’ আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, জুলাই মাসজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলা ব্লকেড ও অযোহযোগ আন্দোলনের প্রভাবও এডিপি বাস্তবায়নে পড়েছে। একই পরিস্থিতি ছিল আগষ্ট মাসে। আগষ্ট মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান, এর তিন দিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। কিন্তু, আগষ্ট মাসজুড়ে প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা যায়। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড—ও স্থবির হয়ে পড়ে। আবার দেশী—বিদেশী অনেক প্রকল্পের ঠিকাদার প্রকল্প এলাকায় না থাকার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। এছাড়া নতুন করে এডিপি অর্থছাড়ও কম করছে। সরকার শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থছাড় করছে।

অন্যদিকে সরকার পাইপলাইনে থাকা প্রস্তাবিত প্রকল্পের পাশপাশি চলমান প্রকল্পও নতুন করে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে চলমান অনেক প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবও আটকে গেছে। সব মিলিয়ে এডিপি বাস্তবায়নও স্থবি্র হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে প্রথম চার মাসে সেতু বিভাগ ব্যয় করছে মাত্র ১.১৪ শতাংশ অর্থ। এছাড়া স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ব্যয় করছে বরাদ্দের ২.৪২ শতাংশ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ব্যয় করছে ২.০১ শতাংশ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হার ২.৯৩ শতাংশ, নৌ—পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৪.৯৩ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৫.৭৩ শতাংশ, এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৬.৭৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যয় করছে ১৩.৯০ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ১০.৪৪ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২.৯০ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯.৬৫ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১০.৯১ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ১১.৫৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।