সুপ্রভাত ডেস্ক »
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিজে দরখাস্ত করে ও পত্রিকায় নিবন্ধ লিখে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আজকে যে বিএনপি মাঝেমধ্যে বাকশাল নিয়ে কটাক্ষ করে সেই বিএনপিকে বলবো, তাদের নেতা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাকশালের সদস্য হওয়ার জন্য নিজে দরখাস্ত দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, দরখাস্ত দেওয়ার পাশাপাশি পত্রিকায় বাকশালের পক্ষে নিবন্ধ লিখেছিলেন। পরবর্তীতে তাকে বাকশালের সদস্য করা হয়েছিলো।’
গতকাল সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতর সম্মেলন কক্ষে লেখক গবেষক সুভাষ সিংহ রায় গ্রন্থিত ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ও বাকশাল’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খবর বাসস’র।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া ও গ্রন্থকার সুভাষ সিংহ রায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে প্রথমে বাকশালের সদস্য করা হয়নি। সেনাবাহিনী প্রধান, বিমানবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধানকে করা হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান ছিলেন উপপ্রধান। সেজন্য তাকে প্রথমে সদস্য করা হয়নি। তিনি দরখাস্ত দিয়ে সদস্য হয়েছিলেন, বাকশালের পক্ষে পত্রিকায় নিবন্ধও লিখেছিলেন। সুতরাং, আজকে যে বিএনপি বাকশাল নিয়ে এতো কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তাদের সেই কথা বলার নৈতিক অধিকার নেই।’
তথ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘স্বাধীনতার পরে ৬ জন সংসদ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, পাটের গুদামে আগুন দেওয়া হয়েছিল, হানাহানি করা হয়েছিল। সে জন্য বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রয়োজন এবং সেটির প্রেক্ষিতেই তিনি বাকশাল গঠন করেছিলেন। বাকশালের অধীনে একই প্ল্যাটফর্মে সবাইকে আনা হয়েছিল, যারা নেতা ছিলেন তাদেরকে বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বাকশাল ব্যবস্থার সুফলও আমরা পেতে শুরু করেছিলাম। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৯.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছিলো এবং ১৯৭৫ সালে ১০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনের ফলে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলাম। চাল এবং অন্যান্য পণ্যের দাম যেটি বেড়েছিলো সেটি কমে এসেছিলো এবং বাকশালের অধীনে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ভালো হয়েছিল। সে সময় ময়মনসিংহের একটি উপনির্বাচনে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছোট ভাই সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জয়লাভ করেছিল।’
পত্র-পত্রিকার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর চারটি পত্রিকা ছাড়া অন্য পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো এটা সঠিক কিন্তু কোনো পত্রিকার কোনো সাংবাদিক বেকার থাকেননি। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খান, গিয়াস কামাল চৌধুরীসহ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। সেই কমিটির সুপারিশে তথ্য অধিদফতর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, কাস্টমস, জুট মিল, বস্ত্র কর্পোরেশনে সব সাংবাদিকের চাকরি হয়েছিলো।’
সাংবাদিকরা এ সময় আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে জিততে বিদেশমুখী নীতি নিচ্ছে কি না -এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘দেখুন রাত-বিরাতে কারা বিদেশিদের কাছে যায় আর কারা বিদেশিদের দাওয়াত খাওয়ায় সেটা তো পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনেই প্রকাশ হচ্ছে। আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বলীয়ান, অন্য কোনো কিছুর শক্তিতে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় গেছে জনগণের ওপর ভর করেই, জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় গেছে। আর তারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় গেছে, পেছনের দরজা দিয়ে অবৈধভাবে দল গঠিত হয়েছে। সুতরাং তারা পেছনের দরজাটা পছন্দ করে। হায়েনা যখন শিকার করে পেছন দিকে কামড় দেয়। বিএনপিও পেছনের দরজা পছন্দ করে।’
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেশ পরিচালনার অন্যতম মূল যে কথা ছিলো, জনগণ এ দেশের মালিক, জনগণকে সেবা করা আমাদের দায়িত্ব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানাভাবে গণতন্ত্র চর্চা করা হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি সময় পেতেন, তাকে সপরিবারে ১৫ আগস্ট হত্যা করা না হতো, বাকশাল বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মডেল হতে পারতো, কারণ তারা দেখতো, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালে দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় ছিলো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। এমন কি চীনের মাথাপিছু আয়ের চেয়েও বেশি ছিল। আজকে চীনের মাথাপিছু আয় ১০ হাজার ডলারের ওপরে। আসলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরে হত্যাকারিরাই দীর্ঘদিন এ দেশ পরিচালনা করেছে এবং তারা বাকশালকে নানাভাবে ভুল ব্যাখ্যা করেছে, বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।