সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক
সময়ের অন্যতম সেরা দল মেসির আর্জেন্টিনা আর চারবারের বিশ্বসেরা জার্মানির শুরুটা ভাল হয়নি একদমই। দু’দলের যাত্রা শুরু হয়েছে হার দিয়ে। এশিয়ার দুই দল সৌদি আরব আর জাপানের কাছে মুখ থুবড়ে পড়েছে আর্জেন্টিনা এবং জার্মান পরাশক্তি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সও শুরুতে গোল হজম করেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। যদিও পরে জয় পেয়েছে ৪-১ গোলের ব্যবধানে। গতবারের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া এবং দু’বারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েও জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে পারেনি। জায়ান্টদের এমন অনিশ্চিত সূচনার পর বুকে কাপন ধরেছিলো অতিবড় ব্রাজিল সমর্থকেরও, কেমন হয় নেইমারদের হেক্সা মিশন!
একটা চাপা উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ছিল ব্রাজিল ভক্তদের মনে। সারা বিশ্বের শত কোটি ফুটবল অনুরাগীও উন্মুখ অপেক্ষায় ছিলেন সার্বিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচ দেখতে। ব্রাজিলের শুরুটা কেমন হয়, কিংবা ব্রাজিলেরও আর্জেন্টিনা, জার্মানির মত পঁচা শামুকে পা কাটা যায় কি না! তা দেখতেই মূলত অধীর ছিলেন সবাই। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত ব্রাজিল আর দুর্ঘটনার শিকার হয়নি। সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে শুভ সুচনা করেছে নেইমার, রিচার্লিসন, রাফিনহা, ভিনিসিয়ুস জুনিয়ররা। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ৯০ মিনিটের লড়াইয়ের প্রথম ভাগে নিজেদের সেরা খেলা খেলতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে চেনা গতি ছন্দ ফিরে পেয়ে সার্বিয়ানদের মুহুর্মুহু আক্রমণে দিশেহারা করে ২ গোল আদায় করে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়ে তিতের শিষ্যরা। স্ট্রাইকার রিচার্লিসন একাই গোল দুটি করে ব্রাজিলের জয়ের নায়ক বনে গেছেন। এর মধ্যে ৭৩ মিনিটে এ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড বাইসাইকেল কিকে অসাধারণ গোল করে সবার নজর কেড়েছেন। রিচার্লিসনের এই গোলটি চোখে লেগে থাকার মত। বক্সের বাম প্রান্ত থেকে ডান-পায়ের টোকায় বক্সের মাঝে দাঁড়ানো রিচার্লিসনকে বলটি দেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।
রিচার্লিসন প্রথমে বলটি নিয়ন্ত্রনে নেন। হালকা উপরে উঠে যাওয়া বলটিকে একটু সময় নিয়ে অসাধারণ এক বাইসাইকেল কিক করেন। বল গিয়ে সার্বিয়ার জালে আছড়ে পড়ে। ব্রাজিলের জয় ছাপিয়ে এখন রিচার্লিসনের সেই বাইসাইকেল কিকের গোলের কথা সবার মুখে মুখে। ফুটবলপ্রেমীদের একটাই কথা, ‘আহ! কি অসাধারণ এক বাইসাইকেল কিকে গোল দেখলাম রিচার্লিসনের পা থেকে! চোখ জুড়িয়ে গেল।’
এক কথায় রিচার্লিসন এই গোলের দ্বারা এরই মধ্যে হিরো বনে গেছেন।
সেই সঙ্গে জেগেছে প্রশ্ন, ‘আচ্ছা! বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কোন ফরোয়ার্ড, স্ট্রাইকারের বাইসাইকেল কিকে এটাই কি প্রথম গোল?’
ভাববেন না রিচার্লিসনই বুঝি প্রথম বাইসাইকেল কিকে এমন দৃষ্টিনন্দন গোল করে হইচই ফেলে দিয়েছেন। বাংলাদেশে টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার শুরুর সময় থেকে যারা বিশ্বকাপ দেখছেন, তাদের সবার মনে না থাকলেও কারো কারো মনে আছে, আজ থেকে ৪০ বছর আগে ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপেও ব্রাজিলের তখনকার শীর্ষ তারকা জিকো এমন এক বাইসাইকেল কিকে গোল দিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। অবশ্য ১৯৮২’র বিশ্বকাপ শুরুর আগেই সক্রেটিসের সাথে জিকো ছিলেন ব্রাজিলের শীর্ষ তারকা। ব্রাজিলীয়ানরা তাকে ডাকতো সাদা পেলে নামে। খবর জাগোনিউজ’র
ইতিহাস জানাচ্ছে, ৪০ বছর আগে স্পেনের মাটিতে সেই জিকো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে বাইসাইকেল কিকে দারুন এক গোল করে আলোড়ন তুলেছিলেন। দিনটি ছিল ১৯৮২ সালের ২৩ জুন। স্পেনের বেনিতো ভিয়ামারিন স্টেডিয়ামে ৪৩ হাজার দর্শকের সামনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-০ গোলে সহজে জিতেছিল ব্রাজিল।
বৃহস্পতিবার রাতে কাতারের স্টেডিয়ামে সার্বিয়ার বিপক্ষে রিচার্লিসন যেমন একা ২ গোল করে দল জিতিয়েছিলেন, ৪০ বছর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচেও ব্রাজিলের ৪ গোলের দুটি করেছিলেন জিকো একা। যার প্রথমটি ছিল বাইসাইকেল কিকে। ম্যাচের ২৮ মিনিটে ডান দিক থেকে একটি সম্মিলিত আক্রমণে প্লেমেকার সক্রেটিসের পা ঘুরে বল চলে যায় আগুয়ান ব্রাজিল রাইট উইং ব্যাক লিওনার্দোর পায়ে। লিওনার্দোর বাতাসে ভাসিয়ে দেয়া সেন্টার গিয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড বক্সের ঠিক মাঝামাঝি, মানে ছোট বক্সের সামান্য বাইরে।
ওঁৎ পেতে থাকা জিকোর আশপাশে কিউই ডিফেন্ডার ছিলেন কয়েকজন। বল রিসিভ করে গোলে শট নিতে গেলে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা তাকে ব্লক করে দিতে পারেন। এমন ভেবে চলন্ত বলে পুরো শরীর শুন্যে ছুঁড়ে দিয়ে ডান পায়ে বাইসাইকেল কিক নেন জিকো। যা কিউই গোলরক্ষক ভ্যান হাটমকে বোকা বানিয়ে তাঁর বাঁদিক দিয়ে চোখের পলকে জালে জড়িয়ে যায়।