জাহাজভাঙা শিল্প : শ্রমিকদের নিরাপত্তা নেই কেন

৭ সেপ্টেম্বর একটি তেলের ট্যাংকার (জাহাজ) কাটার সময় এসএন করপোরেশন নামে একটি জাহাজভাঙা কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ছয়জন মারা যান। এছাড়া আরও ছয়জন দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুর্ঘটনার জন্য যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতিকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় এসএন করপোরেশন নামের জাহাজভাঙা কারখানায় আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানটির তিনটি জাহাজভাঙা কারখানায় অন্তত ১৬ জন মারা গেছেন। বারবার দুর্ঘটনার পরও শ্রমিক সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া এবং গ্রিন সনদ প্রাপ্তির পরও ইয়ার্ডটিতে শ্রমিকদের স্বার্থ উপেক্ষিত ছিল—এমন অভিযোগ পরিবেশবাদীদের।
এসএন করপোরেশনের তিনটি জাহাজভাঙা কারখানা রয়েছে। তিন ইয়ার্ডের অবস্থান সীতাকুণ্ডের তেঁতুলতলা, কদমরসুল ও মাদামবিবিরহাট এলাকায়। এর আগে ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এসএন করপোরেশনের তিনটি ইয়ার্ডে পৃথক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৩০ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে তিনজনের মৃত্যু হয়।

জাহাজভাঙা শিল্পে দুর্ঘটনা নিয়ে কয়েক দশক ধরে দেশে-বিদেশে নানা প্রকার আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন ২০১৮ এবং বিপজ্জনক বর্জ্য ও জাহাজভাঙার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা অনুযায়ী জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চত করার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের পিপিই (সুরক্ষা পোশাক) পরিধান, মাথায় হেলমেট দেওয়া, গ্লাভস, গামবুট পরিধান অন্যতম। এ ছাড়া সম্পূর্ণ গ্যাস ও বিস্ফোরকমুক্ত করে জাহাজ কাটার কথাও বলা হয়েছে।

২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সীতাকুণ্ডের ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৪৭ জন। বর্তমানে সীতাকুণ্ড উপকূলে ৩০টির মতো ইয়ার্ড চালু রয়েছে। এর মধ্যে চারটি গ্রিন ইয়ার্ডের মর্যাদা পেয়েছে। এসএন ইয়ার্ডের তিনটি কারখানার মধ্যে তেঁতুলতলার কারখানাটি গত বছর সবুজ শ্রেণি বা গ্রিন ইয়ার্ডের মর্যাদা পায়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের গঠিত আট সদস্যের তদন্ত কমিটির সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য জানান, দুর্ঘটনার সময় সাবধানতার অভাবের পাশাপাশি শ্রমিকদের সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া ছিল না। জাহাজের পাম্প হাউসটি পুরোপুরি গ্যাসমুক্ত না করেই কাটা হচ্ছিল বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে প্রশাসনের গভীর নজরদারি দরকার। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে, গ্রিন ইয়ার্ডের মর্যাদা পাওয়া সত্ত্বেও এই কারখানাটিতে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা হয়নি। যেসব কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীলদের ভূমিকা রাখা দরকার ছিল তারা সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কারো দায়িত্ব অবহেলার কারণে দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের আহত-নিহত হতে না হয়।